দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই পোল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছিল জার্মান সেনারা। তারপর ধীরে ধীরে প্রতিবেশী দেশের সমস্ত ক্ষমতাই দখল করে নেয় হিটলারের নাৎসি জার্মানি। অর্থ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের দ্রব্য কিংবা যুদ্ধের সামগ্রী— সবই সেসময় পোল্যান্ড থেকে নির্দ্বিধায় ‘লুঠ’ করে আনত জার্মান সৈন্যরা। সম্প্রতি জার্মান সরকারের উদ্যোগে ৭৭ বছর পর পোল্যান্ডে ফিরছে এমনই একটি পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহ, গির্জার ঘণ্টা। যা ‘চুরি’ গিয়েছিল বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে।
বিশ্বযুদ্ধের আগে দক্ষিণ পোল্যান্ডের স্লাভিয়েসিস অঞ্চলের একটি চার্চে ব্যবহৃত হত ঘণ্টাটি। তৈরি হয়েছিল ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার অনুসন্ধান করেও হদিশ মেলেনি ঘণ্টাটির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যবাহিনীর জন্য বন্দুক ও গুলি তৈরির জন্য লুঠ করে আনা ধাতব সামগ্রী গলিয়ে ফেলার চল ছিল জার্মানিতে। অনুমানিক প্রায় ৮০ হাজার লুঠ করা ঘণ্টা গলিয়েছিল নাৎসিরা। ধরে নেওয়া হয়েছিল, সেই ঘণ্টাটিকেও একইভাবে গলিয়ে ফেলা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কাজে।
তবে বছর দুয়েক আগে পোল্যান্ডের উল্লেখিত গির্জার যাজক সন্ধান পেয়েছিলেন ঘণ্টাটির। নুরেমবুর্গের সংরক্ষণাগারে রাখা জার্মান ভাষায় লিখিত একটি বইতে ঘণ্টাটির ছবি দেখে নতুন করে অনুসন্ধানে নামেন তিনি। সেখান থেকেই খবর পান, হামবুর্গ শহরের একটি কবরস্থানে অলক্ষেই পড়ে রয়েছে বিশ্বযুদ্ধে লুঠ করে আনা এমন ১৩০০টি ঘণ্টা। সেই জঞ্জাল থেকে উদ্দিষ্ট ঘণ্টাটি খুঁজে পেতে সময় লাগে বছর দুয়েক। জার্মান সরকারকে জানালে তারাও ব্যবস্থা নেয় ঘণ্টাটি ফিরিয়ে দিতে। তবে মহামারীর কারণে এতদিন সেই কাজ আটকে ছিল। করোনাভাইরাসের প্রকোপ খানিকটা থিতু হতে এবার পোল্যান্ডে পাড়ি দিচ্ছে ৪০০ কেজির প্রকাণ্ড চার্চ-বেল।
তবে বিশ্বযুদ্ধে সামরিক জয়লাভের পর জার্মানির লুঠ করা দ্রব্যাদি ফিরিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করেছিল ব্রিটিশ বাহিনী। খাতায়-কলমে চালু করেছিল এক অদ্ভুত নিয়ম। লুঠ করা সামগ্রীর ব্যবহারের জন্য জার্মান সরকার, সংস্থা কিংবা বাইরের কোনো দেশকেও গুনতে হবে ঋণের মাশুল। সেই নিয়ম ধরেই পোল্যান্ড আপাতত স্থায়ী ঋণ-প্রদানের মাধ্যমেই ফিরে পাচ্ছে ঘণ্টাটি। কারণ ঘণ্টাটির বর্তমান মালিকানা রয়েছে জার্মানির হাতেই। লুণ্ঠিত সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার সৎ প্রচেষ্টা নিলেও, লিপিবদ্ধ আইনের কারণেই বাধ্য হয়ে অর্থমূল্য নেবে জার্মানি...
Powered by Froala Editor