শরণার্থীদের নিয়ে তৈরি দলেই বাজিমাত, বিশ্বক্রিকেটের নতুন ‘ডার্ক হর্স’ জার্মানি?

কেউ আফগানিস্তানের প্রাক্তন নাগরিক। কেউ আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া কিংবা প্যালেস্তাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন জার্মানিতে। তাঁদের সকলকেই এক নতুন জীবন উপহার দিয়েছিল ইউরোপের অন্যতম দেশটি। দিয়েছিল রুটি-রুজির যোগান, মাথা গোঁজার ঠাঁই। আর তাঁরা? হ্যাঁ, প্রতিদান দিয়েছেন তাঁরাও। সম্প্রতি তাঁদের দৌলতেই ক্রিকেটের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা হল জার্মানির নাম (Germany)। সম্প্রতি, প্রথমবারের জন্য টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্লোবাল কোয়ালিফায়ারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল জার্মানি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, জার্মানির জাতীয় দলের প্রায় ৯০ শতাংশ খেলোয়াড়ই শরণার্থী (Refugee)।

গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে টি২০ কাপের মূল পর্বের খেলা। তার আগে বেশ কয়েকদিন ধরে চলেছে গ্রুপ পর্ব। তবে একই সঙ্গে চলছিল পরবর্তী অর্থাৎ ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপে জায়গা দখলের লড়াইও। সহজ ভাষায় মহাদেশীয় বাছাইপর্ব। সেখানে যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে তবেই সুযোগ মেলে মূল টুর্নামেন্টের বাছাই পর্বে খেলার। ইউরোপিয় গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান দখল করে প্রথমবারের জন্য সেই হার্ডলই পেরিয়ে গেল জার্মানি। আরও এক ধাপ কাছে পৌঁছাল বিশ্বকাপের।

গত ২২ তারিখ ইউরোপীয় বাছাই পর্বে ইতালির বিরুদ্ধে খেলতে নামে জার্মানি। মেলে ধরে স্বপ্নের পারফর্মেন্স। বোলিং-এ এক কথায় ঝড় তোলে রেড অ্যান্ড ব্ল্যাক শিবির। মাত্র ১১৭ রানেই আটকে দেয় ইতালিকে। তবে অনবদ্য বোলিং পারফর্মেন্স উপহার দিলেও, মন্থর গতিতে শুরু হয় জার্মানির ব্যাটিং। এদিন প্রথম ১০ ওভারে ৩৫ রানের গণ্ডিও পেরতে পারেনি জার্মানি। ১৫ ওভারের শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে জার্মানির সংগ্রহ ছিল মাত্র ৫৭ রান। তারপরই বদলে যায় ম্যাচের চেহারা। ডায়টার ক্লেইন এবং সাহির নাকাশের ঝড়ো ব্যাটিং জার্মানিকে পৌঁছে দেয় জয়ের দোরগোড়ায়। তবে অধরাই থেকে যায় জয়। স্কোরবোর্ডে ১১৬ রানেই থামতে হয় জার্মান শিবিরকে।

১ রানে পরাজিত হলেও রানরেটের নিরিখে ইতালিকে টপকে ইউরোপিয় বাছাই পর্বে জায়গা করে নেয় জার্মানি। এর আগে ডেনমার্কে দুটি ম্যাচে পরাজিত করে, তালিকার তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল জার্মানরা। এবার রানরেটের নিরিখে ইতালিকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেল তারা। 

আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম মূক-বধির ক্রিকেটার, খেলেছেন অর্ধশতাধিক প্রথম শ্রেণির ম্যাচও

জার্মানিতে ১৮৫৮ সাল থেকে ক্রিকেটের প্রচলন থাকলেও বিশ শতকে প্রায় অবলুপ্ত হয়ে যায় ক্রিকেট। তবে একুশ শতকের গোড়া থেকে আবার শুরু হয়েছিল ক্রিকেট চর্চা। আফগানিস্তান, সিরিয়া, পাকিস্তান, ইরানের শরণার্থীদের নিয়েই তৈরি হয়েছিল প্রথম জাতীয় দল। তাঁদের দৌলতেই মিলেছিল আইসিসির অ্যাসিসটেন্ট সদস্যের পদ। এবার এক নতুন মুকুট জুড়ল জার্মানির মুকুটে। ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়া টি২০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলে ইংল্যান্ড, ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগও পাবেন জার্মান ক্রিকেটাররা। যা প্রায় স্বপ্নের মতোই। এখন দেখার সেই স্বপ্নকে কতটা বাস্তবায়িত করতে পারে রেড-ব্ল্যাক ব্রিগেড…

আরও পড়ুন
সব ফর্ম্যাটের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা মালিঙ্গার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শরণার্থী থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড় – আব্দুল শাকুর ও জার্মানির ক্রিকেট দলের গল্প