ইউক্রেনিয়ান শিশুদের বাঁচাতে রৌপ্যপদক নিলাম জার্মান অলিম্পিয়ানের

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি যোদ্ধাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসায় উন্নতির জন্য নিজের দু’-দুটি নোবেল পদক গলিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেরি কুরি। তাছাড়াও পুরস্কার মূল্য দান করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ এক্স-রে যন্ত্র কেনার জন্য। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও যেন সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল এবার। সম্প্রতি, ইউক্রেনিয়ান শিশু এবং তাদের পরিবারের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে অলিম্পিক পদক নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন জার্মান সাইক্লিস্ট (German Cyclist)। 

টনি মার্টিন (Tony Martin)। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে টাইম ট্রায়াল বিভাগে অল্পের জন্যই তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল স্বর্ণপদক। দ্বিতীয় স্থানে প্রতিযোগিতা শেষ করে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রৌপ্য পদকে। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকেও অংশগ্রহণ করেছিলেন টনি। তবে প্রথম তিনের মধ্যে আর কামব্যাক করা সম্ভব হয়নি তাঁর। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহাওয়ায় এবার জীবনের একমাত্র অলিম্পিক পদকটিও নিলামে তুলছেন তিনি। 

গতকাল নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পদক নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছেন প্রাক্তন জার্মান অলিম্পিয়ান। জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের যে ভয়াবহ ছবি সামনে এসেছে, তারপর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে সোফায় বসে থাকা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তাঁর ভাষায়, নিশ্চুপে এই নৃশংসতা মেনে নেওয়া যায় না। নিলামে এই পদক বিক্রির অর্থমূল্য উইর হেলফিন কিন্ডারনে ফাউন্ডেশনে দান করবেন বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যা ব্যবহৃত হবে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশু ও তাদের পরিবারের কাছে খাদ্য, ওষুধ প্রভৃতি অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউক্রেনের ৭৫ লক্ষ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে যুদ্ধের কারণে। সবার কাছে হয়তো সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে না, তবে ছোটো ছোটো পদক্ষেপেই পৃথিবীকে বদলে ফেলা যায় বলেই বিশ্বাস টনির।

বর্তমানে নিলামে তাঁর রৌপ্য পদকটির অর্থমূল্য ছুঁয়েছে ১০ হাজার মার্কিন ডলারের সীমা। তবে ধীরে ধীরে সেটি আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই আশাবাদী তিনি। আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই নিলাম। 

একটা সময় বিশ্বের সেরা টাইম ট্রায়াল সাইক্লিস্ট হিসাবেই পরিচিত ছিলেন টনি। টানা চার বছর স্বর্ণ পদক ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। ২০২১ সালে ক্রীড়াজীবন থেকে অবসরগ্রহণ করেন টনি। তারপর লাইমলাইট থেকে দূরে নিভৃতেই সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে নেই নিভৃতবাস কাটিয়েই এবার আবার ‘মাঠে’ নামলেন তিনি। যেকোনো যুদ্ধই যেমন মানব সভ্যতার নৃশংস, বর্বর দিকগুলোকে তুলে ধরে, তেমনই চোখে আঙুল তুলে দেখায় মানবিকতার উদাহরণও। এবারেও অন্যথা হল না তার…

Powered by Froala Editor