বিশ্বযুদ্ধ কেটে গেছে ৭৬ বছর। কিন্তু পাপ কখনও পিছু ছাড়ে না। প্রায় আট দশক পর সাজা মিলল নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের এক প্রহরীর। গত বৃহস্পতিবার ৯৩ বছরের সেই বৃদ্ধকে ২ বছরের কারাবাসের আদেশ দিল জার্মানির এক আদালত।
ব্রুনো ডি নামের ওই ব্যক্তি স্টুদফের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের প্রহরী ছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি কাজ পেয়েছিলেন ওই ক্যাম্পে। কিশোর অবস্থাতেই বহু হত্যার সঙ্গে জুড়ে যায় তাঁর নাম। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৫। এই একবছরের সময়ের মধ্যেই তাঁর হাতে মৃত্যু হয় ৫২৩২ জনের। বিশ্বযুদ্ধের পরেও হ্যামবার্গ জভেনাইল কোর্টে তাঁর বিচার হয়েছিল। কিন্তু তখন তাঁর ১৭ বছর বয়স হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ওই ব্যক্তির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ডানজিগে। যার বর্তমান নাম ডানস্ক। তবে এখনকার পোলিশ এই শহর তখন জার্মানির অন্তর্ভুক্ত। আদালতে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেন ওই ব্যক্তি। আদালতে বয়ান রেকর্ড করার সময় তিনি জানান, কিশোর বয়সেই এই কাজ পেয়েছিলেন তিনি। এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না তাঁর কাছে।
২০১৯ সালে আর এক নাৎসি প্রহরী জন ডেমযানসুকের বিচার সময় তাঁর কথা সর্বসমক্ষে আসে। তবে জার্মানির আদালত জানাচ্ছেন বেশিরভাগ অভিযুক্তরাই অশীতিপর হওয়ায়, স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই কারোরই। তাই ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই বিচার-প্রক্রিয়া শেষ করতে হচ্ছে প্রতিদিন। গত এপ্রিল মাসে শুরু হয়েছিল ব্রুনো ডি-এর বিচার। তা শেষ হতে তাই প্রায় তিন মাসের বেশি সময় লেগে গেল।
আরও পড়ুন
ভুল বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, জেলের মধ্যেই খুন করলেন প্রকৃত অপরাধীকে!
সাক্ষ্য হিসাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্স, ইজরায়েল, পোল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ জন ব্যক্তি। যাঁরা চিহ্নিত করতে পারেন এই প্রহরীকে। সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ও তাঁদের মধ্যে বার বার ফিরে আসছিল বিশ্বযুদ্ধের সেই আতঙ্ক।
আরও পড়ুন
কলকাতায় বাঙালি ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা সাহেব ডাকাতের, বিচারে শাস্তি প্রকাশ্যে ফাঁসি
জানা গেছে ১৯৩৯ সালে ওই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প তৈরির সময় সেখানে জনসংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৫ হাজার। অন্তত ৫০ শতাংশ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে। ২২ হাজার মানুষকে পাঠানো হয়েছিল অন্যান্য জার্মান ক্যাম্পগুলিতে। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন ইহুদি। কিন্তু এই ছবি সামান্য খণ্ডচিত্র মাত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছিল নাৎসি বাহিনী। মানসিক এবং শারীরিক দিক দিয়ে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদেরও নির্মমতার সঙ্গে হত্যা করেছিল হিটলারের বাহিনী। ব্রুনো ডি’র বিচারের মাধ্যমেই সেই কলঙ্কিত যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল। জানে গেছে ব্রুনো’র মধ্যে দিয়েই শেষ নাৎসিকর্মীদের বিচার শেষ হল।
আরও পড়ুন
ভারতীয় হাইকোর্টের প্রথম মহিলা বিচারক তিনি, লড়াই করেছেন নারীর অধিকার নিয়েও
Powered by Froala Editor