ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা আসলে কত, তা নিয়ে জল্পনা চলছেই। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, অনেক রাজ্য প্রকাশ করছে না সংক্রমণের সংখ্যা। যদিও ভারত সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই অঙ্ক ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি আরো কঠিন করে দিয়েই প্রতিদিন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে সংক্রমণ। এই অবস্থায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন জার্মানির দুই বিজ্ঞানী।
গোটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই বিজ্ঞানী, সারা পৃথিবীর করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করে একটি গবেষণা চালাচ্ছিলেন। আক্রান্তদের বয়স এবং মৃত্যুর হারের ওপরে ভিত্তি করেই এই গবেষণা। এই গবেষণা থেকে উঠে এল, ভারতে এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা হয়তো ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। যা বর্তমান সরকারি তথ্যের আক্রান্তের সংখ্যার প্রায় সাতগুণ।
বর্তমান সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৯০ এবং এখনও সক্রিয় ঘটনার সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। কিন্তু সেবাস্তিয়ান ভলমার এবং ক্রিশ্চিয়ান বমার, ওই দুই বিজ্ঞানীর হিসাব অনুযায়ী, গত ৬ এপ্রিলেই ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা হওয়া উচিত ছিল ১ লক্ষ ৩৬ হাজার। এই গণনার নিরিখে ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা ২৩ মার্চে ৩২,০০০। এক সপ্তাহ পরে ৩০ মার্চ তা ৮৬,০০০। ওই তারিখে সরকারি তথ্যে উল্লেখিত ছিল মাত্র ৪২৮১টি সংক্রমণের ঘটনা।
তবে স্বাস্থ্যবিভাগ এই তথ্যের বাস্তবতাকে পাত্তা দিতে একেবারেই নারাজ। স্পষ্ট জানানো হয়, এই তথ্য বিশেষ কিছু আনুমানিক বিষয়ের উপরে দাঁড়িয়ে। আমাদের দেশের পরিস্থিতি বাইরের অন্যান্য দেশের মতো না হওয়ায় একই সমীকরণ এখানে প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া মৃত্যুর হার হাসপাতালগুলির পরিষেবার উপরেও নির্ভর করে অনেকটাই। কেবল মাত্র কোভিড-১৯ পরীক্ষার মাধ্যমেই একমাত্র সঠিক সংক্রমণের তথ্য বলা সম্ভব। এমনটাই জানায় স্বাস্থ্য দপ্তর।
জার্মানির মতোই ভারতের এই সংক্রমণ গণনায় ওই বিজ্ঞানীরা কাজে লাগিয়েছিলেন ভ্রমণের তথ্য, সংক্রমিত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হওয়া রোগীর সংখ্যাকে। তাঁদের মতে, সংক্রমিত অনেককেই পরীক্ষা করে ওঠা সম্ভব হয়নি এখনো। মোট সংক্রমিতের ৮০ শতাংশ মানুষের লক্ষণ প্রকট না হওয়ায় তাঁরাও পরীক্ষার ব্যাপার উপেক্ষা করে গেছেন।
তাঁদের এই বিশ্বব্যাপী গবেষণায় উঠে এসেছে, এই মহামারীতে শিশু মৃত্যুর হার ০.০০১৬ শতাংশ। ৮০ ঊর্ধ্ব বয়সের ক্ষেত্রে এই হার গিয়ে ঠেকে ৭.৮ শতাংশে। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার নিরিখে সংক্রমণের হার ইতালিতে ১.৩৮ শতাংশ, জার্মানিতে ১.৩০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশ এবং ভারতে ০.৪১ শতাংশ।
এই গবেষণা কতটা সত্যি বা আদৌ এর ফলাফল আমাদের দেশে কতোটা প্রযোজ্য, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শেষ এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার দেশে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই দ্বিগুণ সংক্রমণের হারে পৌঁছাতে পাঞ্জাবের সময় লেগেছে ১৩ দিন, কর্নাটকের ৯.২ দিন, দিল্লির ৮.৫ দিন। সরকারি নথি অনুযায়ী এই তথ্যও কম চিন্তার নয়। সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। পরিস্থিতি যে কঠিনতর হয়েই চলেছে, এ কথা একবাক্যে স্বীকার করেছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা।