রাজা থেকে ফকির হওয়ার নিদর্শন গোটা পৃথিবীতে তো বটেই, ভারতেও কম নেই। আবার এর উল্টোটাও সমানভাবে সত্যি। অন্তত জর্জ থমাসের ক্ষেত্রে। বহরমপুরের বাবুলবোনা সমাধিক্ষেত্রে অন্যান্যদের সঙ্গে শায়িত তিনি। কিন্তু কে এই জর্জ থমাস?
ব্রিটিশ যুগের শুরুর দিকে ভারতে যে ক’জন ইংরেজ নিজের বুদ্ধির জোরে অতি সামান্য থেকে একজন কেউকেটা হয়ে উঠেছিলেন, জর্জ থমাস তাঁদের মধ্যে একজন। ১৭৫৬ সালে জন্ম নেওয়া এই আইরিশ খুব অল্প বয়সেই জাহাজের সামান্য একজন শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন। পরে সেই কাজ থেকে পালিয়ে তিনি চলে আসেন তৎকালীন মাদ্রাজে। সেখানের নিজামের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কিছুকাল কাজ করেন। কয়েকমাস পর সেই কাজও ছেড়ে দিয়ে ভিড়ে যান ডাকাতদের দলে। বেশ কয়েক বছর পর সার্দানার সৈন্যদলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান থমাস।
একটা সময় সার্দানার বেগমের সাথে তাঁর মতানৈক্য শুরু হয়। ততদিনে তাঁর হাতে এসে গেছে বিশ্বস্ত দক্ষ সৈন্যদল। তাই নিয়েই ১৭৯৭-তে হরিয়ানায় তাঁর নতুন রাজ্যের পত্তন হয়। অবশ্য সেই রাজ্য বেশিদিন টেঁকেনি। মারাঠা, শিখদের মিলিত শক্তির কাছে হার মানতে হয় জর্জ থমাসের। সেখান থেকে কলকাতায় ফেরার পথে বহরমপুরেই মারা যান ‘জাহাজি সাহেব’।
জাহাজের সামান্য শ্রমিক থেকে রাজা হওয়ার গল্প এখন ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। জর্জ থমাসের সমাধি বহরমপুরের সমাধিক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া না গেলেও, সেখানকার বোর্ডে উল্লেখ আছে তাঁর নাম। শুধু কি সমাধিক্ষেত্রেই মুছে গেছে জাহাজি সাহেবের নাম?