গলার ওপরে চেপে বসেছিল শ্বেতাঙ্গ পুলিশ আধিকারিকের হাঁটু। তারপর যুদ্ধ চলে দীর্ঘ ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। না, নিরস্তই ছিলেন তিনি। এই অত্যাচার প্রতিহত করার জন্যও হিংস্র হয়ে ওঠেননি বিন্দুমাত্র। শুধু মৃত্যুর আগে তাঁর মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এসেছিল ‘আই ক্যান’ট ব্রিদ’। গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘটে যাওয়া বর্ণবিদ্বেষমূলক হিংস্রতার বর্বরতম উদাহরণ জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড। এবার সেই মামলারই নিষ্পত্তি টানল মিনিয়াপোলিস কাউন্সিল। জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের জন্য ঘোষণা করা হল ২কোটি ৭০ লক্ষ মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরই আগুন জ্বলে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে। তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। ‘আই ক্যান’ট ব্রিদ’ কিংবা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ পোস্টারে ছেয়ে গেছিল পথঘাট। মামলা দায়ের করা হয়েছিল মিনেসোটা প্রদেশের চার পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে। মাত্র মাস আষ্টেকের মধ্যেই দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই মামলার নিষ্পত্তি করতে ভূমিকা নিল প্রশাসন। গত শুক্রবার মিনিয়াপোলিস নগর কাউন্সিলে পাস মামলা নিষ্পত্তির খসড়া। ঘোষিত হয় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ।
তবে সত্যিই কি বিচারও পেলেন জর্জ ফ্লয়েড? সেই দিকেই আঙুল তুলছে ফ্লয়েডের পরিবার। ডেরেক চৌভিন। তিনিই সেই পুলিশ অফিসার, যিনি কণ্ঠরোধ করে হত্যা করেছিলেন জর্জ ফ্লয়েডকে। তাঁর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি বিচারব্যবস্থা। অথচ ১৯ বছরের কর্মজীবনে তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ রয়েছে কয়েক ডজন। পুলিশ ফোর্স থেকে তাঁকে পাকাপাকি বরখাস্ত করে যাতে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হয়, সেই আবেদনই করেছেন ফ্লয়েডের আইনজীবী। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আরও তিন পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে সহযোগিতা এবং ঘটনাটি সমর্থনের অভিযোগ। সে মামলা গতি না পেলে সতিই কি বিচার পাবেন জর্জ?
তবে সারা বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যে শেষ পর্যন্ত মাথা নত করতে বাধ্য হল নগর কাউন্সিল— তাই যেন একটা বড়ো সাফল্য। জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে ক্ষতিপূরণের অর্থ থেকে ৫ লক্ষ ডলার উৎসর্গ করা হবে শিকাগো অ্যাভিনিউয়ের উন্নয়নে। যেখানে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গাতেই গড়ে তোলা হবে স্মৃতিসৌধ। তাঁর বোনের কথায়, মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকার অধিকার বুঝে নেওয়ার শিক্ষা দিয়ে গেছেন জর্জ। আর সেই ঐতিহাসিক পরিবর্তনেরই সাক্ষী হয়ে থাকবে এই স্মৃতিসৌধ…
আরও পড়ুন
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা, কৃষ্ণাঙ্গ সান্তা ক্লজের জন্ম দিয়েছিল মার্কিন প্রদেশ
Powered by Froala Editor