রাজ্যে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে করোনার প্রকোপ। চরম থেকে চরমতর পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে স্বাস্থ্য সংকট। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ। একদিকে যেমন অক্সিজেনের জন্য হাহাকার গোটা বাংলাজুড়ে, অন্যদিকে শয্যা খালি নেই অধিকাংশ হাসপাতালগুলিতেই। কঠিন সময়ে প্রিয়জনকে কোথায় নিয়ে যাবে মানুষ? অতিমারীর সঙ্গে লড়াই লড়তে এবার অভিনব এক উদ্যোগ নিলেন তরুণরা। কোভিড চিকিৎসা, অক্সিজেন সরবরাহকারী, কোভিড টেস্ট, আক্রান্তদের বাড়ি খাবারের হোম ডেলিভারি-সহ একাধিক জরুরি বিষয়ে তথ্য একত্রিত করলেন তাঁরা। তৈরি করে ফেললেন একাধিক ওয়েবসাইট। সেখানে গেলেই কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত যোগাযোগের হদিশ পাবেন যে কেউ।
“অনেকে অক্সিজেন পাচ্ছেন না, কেউ বেড পাচ্ছেন না হাসপাতালে— এমন অসংখ্য পোস্ট চোখে পড়ছিল ফেসবুকে। সেখানে অনেকেই হয়তো কমেন্টে জানিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় কনট্যাক্ট। তবে সবটাই খুব ছড়িয়ে ছিল। সেটাকে এক জায়গায় করাটা দরকার ছিল ভীষণ রকম। সেটাকে একত্রিত করতেই এই ওয়েবসাইট তৈরি করা”, বলছিলেন সৌগত রায় বর্ধন। ‘কোভিড সমন্বয়িং’ ওয়েবসাইটের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি।
সমন্বয়িং ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি হয়েছে একাধিক তথ্যভাণ্ডার। কোথাও গুগল স্প্রেডশিটের মাধ্যমেই তৈরি করা হয়েছে তথ্য তালিকা, কোথাও আবার স্বতন্ত্র এক-একটি পোর্টালে একত্রিত করা জরুরি যোগাযোগের সূত্রগুলি। ‘কোভিড রিসোর্সেস ওয়েস্টবেঙ্গল’ নামে এমনই একটি পোর্টাল বানিয়েছেন কলকাতার তরুণী মেঘমালা ভৌমিক। মেঘমালা জানালেন, “বাবা, মা’র অসুস্থতার জন্য এই ধরনের নম্বর খুঁজতে গিয়েই খুব সমস্যার মুখে পড়েছিলাম। তখনই পোর্টালটা বানানো প্রয়োজনীয় কনট্যাক্টগুলো এক জায়গায় করে। প্রথমে আমি নিজেই সেগুলো যাচাই করে আপলোড করছিলাম। পরে আমার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব এগিয়ে আসে বিষয়টাতে আমাকে সাহায্য করতে।”
তথ্য যাচাইয়ের প্রসঙ্গে সমন্বয়িং-এর নির্মাতা তথা প্রোগ্রামার সায়নদীপ জানালেন, “আমাদের সাইটে যাতে যে কেউ তথ্য আপলোড করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রেখেছি আমরা। তবে আপলোডের পরেই সবসময় সেটাকে যাচাই করে নিচ্ছি। অনেকক্ষেত্রেই ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল নম্বর দেওয়া হচ্ছে। প্রতিমুহূর্তেই এই ধরনের নম্বরগুলো সাইট থেকে ডিলিট করে দিচ্ছি আমরা।” পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি প্রতিবেশী বাংলাদেশের জন্যেও তৈরি হয়েছে সমন্বয়িং-এর একটি পৃথক ওয়েবসাইট। কাজ চলছে ত্রিপুরার আলাদা ডেটাবেস তৈরির।
আরও পড়ুন
করোনার একাধিক স্ট্রেন সক্রিয় ভারতে, হার মানছে অ্যান্টিবডিও
এছাড়াও ‘কলকাতা কোভিড১৯ রিসোর্স’ নামে তৈরি হয়েছে আরেকটি পৃথক অ্যাপও। সেইসঙ্গে পোর্টালেও তথ্যপ্রদানের পরিষেবা জারি রেখেছে এই সাইটটির কর্তৃপক্ষ। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন আইআইটি কানপুরের ছাত্ররা। বানিয়ে ফেলেছেন ‘ইন্ডিয়া কোভিড সাপোর্ট' নামের একটি পোর্টাল। সেইসঙ্গে সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের তথ্য একজোট করেছে ‘কোভিড রিলিফ’ নামের আরও একটি ওয়েবসাইট।
আরও পড়ুন
ইজরায়েলে একদিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা শূন্য, ১০ মাসে প্রথম
ভয়াবহ এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে তরুণদের এই উদ্যোগ যেন ভরসা যোগাচ্ছে আমাদের। একদিকে যেমন রণাঙ্গনে নেমে কোথাও বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। তেমনই কেউ রাতের পর রাত জেগে একাগ্রভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন রোগীদের। বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন শঙ্খ ঘোষের সেই লাইনটাই, “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”।
আরও পড়ুন
করোনায় প্রয়াত মানবতাবাদী নেতা মৌলানা ওয়াহিউদ্দিন খান
“আমরা কাছে এখন দুটো পথ খোলা রয়েছে। এক আমরা গোটা সিস্টেমটাকে দোষারোপ করতে পারি। আর দুই হচ্ছে নিজেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। গোটা পরিস্থিতি আয়ত্তে এলে নয় সরকারের অপ্রতুলতা নিয়ে কথা বলা যাবে। চর্চা করা যাবে, দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। এখন লড়াই করার সময়। সেটাকে মাথায় রাখতে হবে আমাদের”, বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ সমাজকর্মী। সত্যিই এই সময়টা লড়াই করার। আর তাতে যে জয় আসবে তা এক প্রকার নিশ্চিত। তরুণ-তরুণীদের এই লড়াই তো বৃথা যেতে পারে না…
নিচে দেওয়া রইল ওয়েবসাইটগুলির লিঙ্ক-
১. https://kolcovidresource.glideapp.io/
২. https://covidresourceswestbengal.carrd.co/
৩. https://docs.google.com/spreadsheets/d/1ZSFKlsqnu9f_iiSlxkePLLj1aRTRBfjUijaezPtjafM/htmlview#gid=0
৪. https://covid.someannoying.com
৫. https://covid.someannoying.com/bd/
৬. https://covidrelief.glideapp.io/
৭. https://indiacovidsupport.com/
Powered by Froala Editor