কলকাতার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে হুগলি নদী। যে নদীপথে একদিন এসে নোঙর ফেলেছিলেন জব চার্নক। তারপর শহরের ওঠাপড়ার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছে এই নদী। আর এখন নদীর বুকে ঘুরতে ঘুরতে সেইসব ইতিহাসকে স্পর্শ করে দেখতে পাওয়া যাবে। আজ থেকেই সেই পরিষেবা শুরু করে দিল রাজ্য পরিবহণ দপ্তর। ‘গ্যাঙ্গেজ রিভার হেরিটেজ ক্রুজ’ নামে এই পরিষেবা চালু থাকবে সপ্তাহে ৭ দিনই।
সপ্তাহের ৫ দিন বিকেল ৪টা ও ৬টা, এই দুবার মিলেনিয়াম পার্ক ঘাট থেকে শুরু হবে যাত্রা। দেড় ঘণ্টার সফর শেষ হবে আবারও মিলেনিয়াম পার্কেই। সপ্তাহান্তের দুদিন অবশ্য দুপুর ১২টা এবং ২টোর সময় আরও দুটি সফর চালু থাকবে। যদিও কলকাতার বেশ কিছু পরিবহণ সংস্থা আগেই এমন উদ্যোগ চালু করেছে, কিন্তু তার খরচ অনেকটাই বেশি। আর এক্ষেত্রে পুরো সফরের খরচ মাথাপিছু মাত্র ৩৯ টাকা।
দেড় ঘণ্টার সফরে এই বিলাসবহুল ফেরি যাত্রীদের ঘুরে দেখাবে চাঁদপাল ঘাট, আর্মেনিয়ান ঘাট, বিবাদী বাগ স্টেশন, নিমতলা ঘাট মহাশ্মশান, ভূতনাথ ও শ্মশান কালীর মন্দির, সারদা মায়ের স্মৃতি বিজড়িত মায়ের ঘাট। ফলে কলকাতা শহরের প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস যে চোখের সামনে বাস্তব হয়ে উঠবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। আর তার সঙ্গে সরকারি গাইড এবং ব্রোসিয়ার প্রতিটি ইতিহাস জানিয়ে দেবে যাত্রীদের। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের শিল্প-ইতিহাসের অধ্যাপক দেবদত্ত গুপ্ত জানাচ্ছেন, “গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণের সময় কলকাতার ইতিহাসকে চেনা যায় অনেক কাছ থেকে। ব্রিটিশদের হাতে শহরের পত্তন এবং ক্রমশ তার ভাঙা-গড়া বোঝা যায় নদীর ধারের স্থাপত্যগুলো দেখে। বোঝা যায় শহরের বিবর্তনকেও। তাই এই উদ্যোগ সফল হবে বলেই আশা করছি।”
লন্ডন বা সিঙ্গাপুরের মতো শহরের এমন ইতিহাসভ্রমণ বেশ জনপ্রিয়। এবার কলকাতাতেও শুরু হল সেই ব্যবস্থা। আর এই বিশেষ ফেরিতে সারি সারি সাজানো থাকবে নানা ঐতিহাসিক ছবি। সঙ্গে আস্তে আস্তে বাজবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর। এমন একটা নস্টালজিক জলভ্রমণ শুরু হয়ে গেল ঠিক পুজোর প্রাকমুহূর্তেই। আপাতত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিটা সফরে মাত্র ১৫০ জন যাত্রী ঘুরতে পারবেন। কলকাতাবাসীর কাছে এই খবর সত্যিই আনন্দের।
আরও পড়ুন
একটি সবুজ দরজার সঙ্গে হারিয়ে গেল মোঘল আমলের টুকরো ইতিহাসও
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১৬০ বছরের ইতিহাসের সমাপ্তি, হতে চলেছে হিমাচলের প্রবাদপ্রতিম ‘নওরোজি অ্যান্ড সন্স’