শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে –
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে?
সুকুমার রায়ের এই কবিতা পড়েনি এমন বাঙালি বোধহয় দুষ্কর। কিন্তু এ ঘটনা কোনো ব্যক্তি গঙ্গারামের নয়। ছত্তিশগড়ের বাওয়ামোহাত্রা গ্রামের একটি কুমিরের নাম গঙ্গারাম, যাকে নিয়ে ওই গ্রামের মানুষদের ভালোবাসা আপনাকে চমকে দেবে।
একশো তিরিশ বছরের গঙ্গারাম হল সেই গ্রামের চোখের মণি। গত ৮ জানুয়ারি গঙ্গারাম মারা যায়। কিন্তু গ্রামের লোকদের কাছে সে ছিল পরিবারের সদস্যের মতো। তাই তাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামবাসীরা। কিন্তু এই ভালোবাসার পেছনে কারণ কী! স্থানীয় বাসিন্দা বীর দাশ জানান, গঙ্গারামের বাস ছিল যে ঝিলে সেখানে গ্রামের বাচ্চারা প্রায় বছরভর সাঁতার কাটত। কিন্তু কোনোদিন কুমিরটির একটা আঁচড় পড়েনি তাঁদের গায়ে। এতটাই একাত্ম ছিলেন কুমীরটির সঙ্গে গ্রামবাসীরা।
কিন্তু সে মারা যাওয়ায় শোকের অন্ত নেই গ্রামবাসীদের। ট্রাক্টরে করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয় তাকে। পাঁচশ মানুষের সমাগম হয়েছিল তার চলে যাবার দিনে। অন্ত্যষ্টি ক্রিয়া শেষে গঙ্গারামকে পুকুরের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়।
গ্রামবাসীরা তাকে স্মরণ করে সম্প্রতি একটি মন্দিরের প্রস্তাবনা দিয়েছেন। গঙ্গারাম মগরমচ্ছ কী মন্দির তার নাম হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। মন্দিরে থাকবে নর্মদার মূর্তি। গ্রামবাসীরা যে যেমন পেরেছেন সাহায্য করেছেন। এমনকি, মানুষের মৃত্যুর পরে যেরকম আচার অনুষ্ঠান হয় এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। চাঁদা তুলে প্রীতিভোজ-ও করানো হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এখন মূর্তি প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এহেন চমকপ্রদ ঘটনা পুরোটাই কি প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা, নাকি মন্দির বানিয়ে কুমিরটিকে ধর্মের কারণে ব্যবহার করা – এখন সেটাই দেখার।