বছর দুয়েক আগের কথা। রীতিমতো চমকে দিয়েছিল জাতীয় রিপোর্ট। গঙ্গা দূষণের মাত্রা নাকি কমে গেছে ৫০-৫৫ শতাংশ। রিপোর্ট না দেখেও, সে-কথা বলে দিতে পারত যে-কোনো সাধারণ ব্যক্তি। ডলফিনের প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে জলের বর্ণ পরিবর্তন— প্রত্যেকক্ষেত্রেই বোঝা গিয়েছিল ক্রমে সুস্থ হচ্ছে গঙ্গার (Ganges) পরিবেশ। কিন্তু তারপর বছর ঘুরতে ফের যেই কে সেই!
না, গঙ্গার এই আকস্মিক সুস্থতার জন্য কোনো বিশেষ প্রকল্প দায়ী নয়। দায়ী, লকডাউন। লকডাউনে কল-কারখানা বন্ধ হওয়ার জন্যই হঠাৎ করে চরিত্র বদলেছিল গঙ্গা। হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনটাই জানাল জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (National Green Tribunal)। বিগত চার দশক ধরে গঙ্গা দূষণরোধে একাধিক প্রকল্প নিয়েছে সরকার। শুধু বিগত আট বছরেই খরচ হয়েছে ৪৬৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু ৪০ বছরের এই দূষণরোধী কর্মকাণ্ডে গঙ্গায় আদৌ কী প্রভাব পড়েছে, তা অস্পষ্ট সকলের কাছেই। গঙ্গার স্বাস্থ্যোন্নতি তো দূরের কথা, ক্রমেই বেড়েছে দূষণের মাত্রা।
সম্প্রতি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বিচারপতি আদেশ কুমার গোয়েলের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল একটি বিশেষ বেঞ্চ। জাতীয় গঙ্গা কাউন্সিলের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই বেঞ্চ। ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ প্রকল্প যে ব্যর্থ হয়েছে, সে-কথাই একভাবে ফুটে ওঠে এই প্রতিবেদনে।
গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের অভিমত, এখনও ৫০ শতাংশের বেশি পয়ঃপ্রণালীর জল পরিশোধন ছাড়াই নিষ্কাশিত হয় গঙ্গায়। তাছাড়াও অধিকাংশ কারখানাতেই ব্যবহৃত হয় না কোনোরকম ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। বিশেষ করে, গঙ্গার উত্তরপ্রবাহে গঙ্গা ও তার উপনদী, শাখানদীগুলিতে মাত্রা ছাড়িয়েছে রাসায়নিক দূষণের পরিমাণ। কোনোরকম সাফল্য ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য এই প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার অর্থ কী? এই প্রশ্নই তুলছে গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।
আরও পড়ুন
প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার দূষিত জল মিশছে বারানসীর গঙ্গায়!
প্রশ্ন থেকে যায়, গঙ্গার এই দুর্দশার জন্য আসলে দায়ী কে? না, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি দায়ী নয় প্রকল্পের এই সার্বিক ব্যর্থতার জন্য। একদিকে যেমন বদলেছে দেশের সরকার, তেমনই বদল হয়েছে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা প্রশাসনও। স্থানীয় প্রশাসন থেকে উপর মহল— সর্বস্তরেই স্পষ্ট নিষ্ক্রিয়তার ছাপ। এমনটাই অভিমত বিচারকদের। শুধুমাত্র গঙ্গা দূষণ রাজনৈতিক চর্চার বিষয় হয়েই রয়ে গেছে দীর্ঘ ৩৭ বছর। তার বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে, তা নিয়ে আগ্রহ নেই কারোরই। পূর্ববর্তী প্রশাসন ও সরকারের ঘাড়েই ব্যর্থতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে এই দীর্ঘ সময় ধরে।
আরও পড়ুন
সংকটে গঙ্গা, সিন্ধু; ২০৫০-এর মধ্যে দেখা দেবে জলাভাব!
গঙ্গা দূষণ শুধু গঙ্গার বাস্তুতন্ত্রকেই নয়, প্রভাব ফেলছে মানুষের জীবনেও। দূষণের জেরে ছড়াচ্ছে নানাধরনের রোগ। জরুরিভাবে ব্যবস্থা না নিলে, আগামীদিনে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে পরিস্থিতি, আশঙ্কা পরিবেশবিদ ও বিচারকদের। আগামী ১৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারকরা। এই কয়েকমাসের মধ্যেই গঙ্গা দূষণ রোধের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের নীল-নকশা জমা দিতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে। এখন দেখার, গ্রিন ট্রাইব্যুনালের এই কঠোর পদক্ষেপের পর আদৌ পরিস্থিতি বদলায় কিনা…
আরও পড়ুন
গঙ্গা বাঁচাতে উৎস থেকে মোহনা অবধি দৌড় মধ্যপ্রদেশের অতুলের
Powered by Froala Editor