ব্রিটেনের পূর্ব ব্রিস্টলে একটি অকশন সংস্থার লেটারবক্সে গোটা সপ্তাহান্ত জুড়ে ঝুলে ছিল স্বয়ং গান্ধীজির চশমা। মুহূর্তেই নষ্ট হয়ে যেতে পারত শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন। এমনকি চুরিও যেতে পারত। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী থাকল ব্রিস্টল।
সোমবার সকালে অকশন কোম্পানির এক কর্মীর প্রথম নজরে আসে, তাঁদের ডাকবাক্স থেকে ঝুলছে একটি সাধারণ খাম। তার সঙ্গে রয়েছে একটি চিরকুটও। তাতে লেখা, ‘মহাত্মা গান্ধীর চশমা’। কোম্পানির মালিক অ্যান্ড্রু স্টোয়ির কাছে ওই কর্মী জমা দেন খামটি। বর্ণনা করেন ঘটনার। স্বাভাবিকভাবেই চশমাটি যে গান্ধীজির, এমনটা একেবারেই বিশ্বাস করেননি তিনি। সারাদিন পকেটে করেই সেই খাম নিয়ে ঘুরেছেন অ্যান্ড্রু স্টোয়ি।
পরে খামটি খুলে পরীক্ষা করতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় অকশন মালিকের। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং সময় মিলিয়ে দেখতেই মিলে যায় গোল ফ্রেমের সোনার জল করা পাতের তৈরি চশমাটি। হ্যাঁ, সত্যিই তো গান্ধীজির চশমা! নিলামে যার দাম উঠতে পারে কমপক্ষে ১৫ হাজার পাউন্ড। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চোদ্দ লক্ষ। তড়িঘড়ি যোগাযোগ করা হয় চশমার মালিকের সঙ্গে। চশমার দাম শুনে চমকে ওঠেন তিনিও।
জানা গেছে, চশমাটি ওই ব্যক্তি পেয়েছিলেন তাঁর বাবার থেকে। তাঁর বাবার এক আত্মীয় ১৯২০ সাল নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকায় সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন গান্ধীজির। ঘনিষ্ঠও হতে পেরেছিলেন তাঁর। সেখানেই উপহার হিসাবে গান্ধীজি তাঁকে এই চশমা দেন। পছন্দের মানুষকে গান্ধীজি মাঝে মাঝেই উপহার দিতেন নিজের ব্যবহারের জিনিস। সেদিক থেকেও ইতিহাস যে মিলে যায় হুবহু, তা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন
'আমার প্রার্থনার রাম, দশরথপুত্র ও অযোধ্যার রাজা সেই ঐতিহাসিক রাম নন', বলেছিলেন গান্ধীজি
অ্যান্ড্রু স্টোয়ির মতে, গান্ধীজির ব্যবহৃত প্রথম চশমাই হয়তো এটি। কারণ চশমার পাওয়ার তাতে অনেকটাই কম। এত বছরের পুরনো হওয়ায় চশমাটির শক্তি যে অনেকটাই কমে গেছে তাতে সন্দেহ নেই। আর এই অবস্থায় চশমাটি ঝুলন্ত ভাবে লেটারবক্সে পড়ে ছিল দু’দিন। অকশন কোম্পানির মালিক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি কোনোভাবে এটি পড়ে যেত সেখান থেকে তাহলে চিরতরেই মুছে যেত ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন। অসাবধানতা বসত কেউ ডাস্টবিনেও ফেলে দিতে পারত এটিকে।
এই অকশন কোম্পানির কাছে আজীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ এই চশমাই। এমনটাই মনে করছেন কোম্পানির মালিক। খুব সম্প্রতিই নিলামে উঠতে চলেছে এই চশমা। তবে সংক্রমণের কারণে ২১ আগস্ট অনলাইনেই নিলামে চড়বে এটি। কিন্তু এমনই একটি ইতিহাসের বহুমূল্য সম্পদের বিষয়ে কি এতটুকুও অবগত ছিলেন না ওই ব্যক্তি? বার বার ফিরে আসছে সেই প্রশ্নই...
Powered by Froala Editor