ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাচ্ছে দুবাইয়ের নবনির্মিত লাইব্রেরি

ইতিহাস বলে, সম্রাট অসুরবনিপালের সৌজন্যে মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে উঠেছিল বিশ্বের প্রথম আধুনিক লাইব্রেরি। তবে পরবর্তীতে গ্রন্থরচনা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের সেই গৌরব হারায় আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে, রাজনৈতিক অস্থিতিই তার অন্যতম কারণ। এবার সেই হারানো গৌরবকেই নতুন করে ফিরিয়ে আনছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চলতি বছরেই সে-দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র দুবাই-এ (Dubai) খুলেছে আশ্চর্য এক লাইব্রেরি (Library)। যেখানে পা রাখলে মনে হবে যেন ভবিষ্যতের দুনিয়ায় হাজির হয়েছেন আপনি। 

মহম্মদ বিন রাশিদ লাইব্রেরি (Mohammed Bin Rashid Library)। ২০১৬ সালে এই গ্রন্থাগার নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিল দুবাই প্রশাসন। সবমিলিয়ে ১ বিলিয়ন দিহরাম অর্থাৎ ২৭.২ কোটি ডলারের খরচে মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই গড়ে তোলা হয় প্রকাণ্ড লাইব্রেরি। অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সাহিত্য, বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, প্রযুক্তিবিদ্যা— ৫৪ হাজার বর্গমিটারের এই লাইব্রেরিজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ১১ লক্ষেরও বেশি মুদ্রিত এবং ডিজিটাল গ্রন্থ। তাছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকা, মানচিত্র, গবেষণাপত্র পড়ারও সুযোগ পাবেন পাঠকরা। রয়েছে অজস্র অডিও বুক, গান ও লোক-কবিতার সংকলন। শুধু তাই নয় এই লাইব্রেরির মধ্যে রয়েছে ছোটোখাটো একটি মিউজিয়ামও। বিভিন্ন দুর্লভ পাণ্ডুলিপি এবং মুদ্রিত গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ সংরক্ষিত হয়েছে সেখানে। স্থানীয় পাঠক হোক কিংবা পর্যটক— সকলের জন্যই বিনামূল্যে এই লাইব্রেরিতে পঠন-পাঠনের সুবিধা প্রদান করে চলেছে দুবাই প্রশাসন। 

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, মানব লাইব্রেরিয়ানদের পাশাপাশি এই গ্রন্থাগার ‘পরিচালনা’ দায়িত্ব পালন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত বেশ কিছু রোবট। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন রোবট। কাউন্টারে পাঠক পছন্দের বই-এর সন্ধান করলেই, গ্রন্থাগার থেকে সেই বই খুঁজে বার করে রোবট। তারপর স্বয়ংক্রিয় রেলের মাধ্যমেই সেই বই এসে হাজির হয় পাঠকের কাছে। পাঠক বই ফিরত দেওয়ার পর একইভাবে নির্দিষ্ট স্থানে বই রেখে আসার কাজও করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত এই রোবট। 

অন্যদিকে এই লাইব্রেরির স্থাপত্যকর্মও দেখার মতোই। কোরান পাঠের জন্য ব্যবহৃত ‘রেহেল’-এর আকারেই নির্মিত হয়েছে সাত তলার এই লাইব্রেরিটি। এখানেই শেষ নয়, লাইব্রেরির অভ্যন্তরেও স্বাদ পাওয়া যাবে আরব দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যের। সবমিলিয়ে, এই গ্রন্থাগার যেন ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির মিলনক্ষেত্র। 

চলতি বছর জুন মাসেই সাধারণের জন্য খুলে গিয়েছিল এই লাইব্রেরি। উদ্বোধনের সময় ১০ লক্ষ বই-এর সংগ্রহ ছিল বিন রাশিদ লাইব্রেরিতে। বিগত চার মাসেই সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে লক্ষাধিক। আগামীদিন ব্রিটিশ লাইব্রেরিকেও ছাপিয়ে যেতে পারে বিন রাশিদ লাইব্রেরি, এমনটাই মনে করছেন বইপ্রেমীরা… 

Powered by Froala Editor

Latest News See More