বয়স যেন তাঁর কাছে স্রেফ সংখ্যামাত্র। গতকাল ৯০-এ পা দিলেন মিডিয়া-সম্রাট রুপার্ট মার্ডক। তবে এই বয়সে এসেও নিজের সাম্রাজ্য শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন তিনি। বিগত দু-বছরের বেশ সময় ধরেই হোমউডের বাড়িতে তিনি রয়েছেন স্ত্রী জেরি হলের সঙ্গে। জেরিই জানান, লকডাউনও বিন্দুমাত্র গতিরুদ্ধ পারেনি তাঁকে। এর মধ্যেও বাড়িতে থেকেই নিয়মিতই মিটিং-ই অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি নতুন করে গুঞ্জন উঠেছে তাঁর সাম্রাজ্য হস্তান্তর নিয়ে। কোথায় যাবে এই বিপুল সম্পত্তির মালিকানা?
‘ফক্স’-এর মালিকানা তো বটেই; পাশাপাশি ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ হোক কিংবা ‘দ্য সান’, ‘দ্য টাইমস’ থেকে ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ এনএফএল গেমসের ব্রডকাস্টিং— বৈশ্বিক মিডিয়ায় সবথেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বর্তমানে তিনিই। তবে ২০১৭ সালে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক বিনোদনের অন্যতম ব্র্যান্ড ’২১ সেঞ্চুরি ফক্স’-কে ৭১ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দিয়েছিলেন ডিজনির কাছে। হাতছাড়া করেছিলেন সিম্পসন থেকে এক্স-ম্যান কিংবা অবতার ফ্র্যাঞ্চাইজিও।
সেই ঘটনাকে অনেকেই মার্ডক সাম্রাজ্যের ফাটল হিসাবেই চিহ্নিত করেন। তবে শুধু বিনোদনে নয়, সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছে মার্ডকের রাজত্ব। মার্ডক ও তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র জেমসের মালিকানাধীন ‘নিউজ অফ দি ওয়ার্ল্ড’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল হ্যাকিং-এর। ব্রিটিশ পুলিশের ফোনে ‘আড়ি’ পাতার কারণে জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। অন্যদিকে পারিবারিক ব্যবসার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেছিলেন জেমস। আর তারপরেই ‘নিউজ কর্প’-এর বোর্ড থেকে ইস্তফা দেন সম্রাটের কনিষ্ঠ পুত্র। তবে পুরো বিষয়টি সামাল দিয়েছিলেন সম্রাট নিজেই।
তবে শুধু জেমস নন, আরও পুত্র ল্যানচানের আচরণও বেশ চিন্তার কারণ মার্ডকের কাছে। ২০০৬ সালে হঠাৎই পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান তিনি। এক দশক পরে আবার ফিরে আসা। বর্তমানে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম টুবি’র মালিক তিনি। তা যেন তিনি পারিবারিক ব্যবসার বিকল্প হিসাবেই প্রস্তুত করে রেখেছেন। তাছাড়াও বাবার অনুপস্থিতিতে তাঁর ‘সর্বোচ্চ কর্তা’-র মনোভাবও বাকি ভাইদের সঙ্গে দূরত্ব গড়ে তুলছে ধীরে ধীরে।
আরও পড়ুন
এবার থেকে নজরদারির আওতায় অনলাইন মিডিয়াও, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
অন্যদিকে দেখতে গেলে টেলিভিশনেও কমেছে ফক্সের দাপট। বিগত বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ লক্ষ মানুষ বাতিল করেছেন টেলিভিশন সাবস্ক্রিপশন। অন্যান্য টিভি মিডিয়ার সঙ্গে সেখানেও ধাক্কা খেয়েছে ফক্স। পাশাপাশি এনএফএল গেমসের সম্প্রচারক হিসাবে অ্যামাজন প্রাইম দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকটাই গুরুত্ব কমে গেছে ফক্সের স্পোর্টস নেটওয়ার্কের। যেখানে অ্যামাজন প্রাইমের মতো ডিজিটাল প্রতিদ্বন্দ্বী একই সাবস্ক্রিপশনে একাধিক সুবিধা দিচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে পৃথক পৃথক টেলিভিশন চ্যানেলের লড়াই যে অসম, তা না বললেও চলে।
বর্তমানে সেই কারণেই হয়তো আবারও কোনো বড়ো অ্যাসেট বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছেন মিডিয়া-সম্রাট। তবে তা ঠিক কী এখনও জানা নেই কারোর। ডিজনি’র সঙ্গে চুক্তির কারণেই আপাতত সেই গুটির চালটা খেলতে পারছেন না রুপার্ট মার্ডক। তবে বিশ্লেষক ক্লেয়ার এন্ডার্সের মতে, আর যাই হোক সংবাদমাধ্যম হস্তান্তরের কথা বিন্দুমাত্রও ভাবছেন না মার্ডক। কারণ ‘নিউজ ম্যান’ হিসাবেই সাত দশক আগে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। সংবাদের প্রতি তাঁর আলাদা টানের জন্যই সে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন রুপার্ট।
আরও পড়ুন
মিডিয়ায় ৫টি নতুন কোর্স, ভবিষ্যতের দিকে নজর অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির
তবে তা আর কতদিন? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে বার বার। মার্ডকের অবর্তমানে তাঁর এই বিপুল মালিকানার অংশীদারি হবেন তাঁর চার সন্তান। তা সত্ত্বেও বাবার তৈরি এই সাম্রাজ্যের ভার ঠিক কতটা বহন করতে পারবেন বা চাইবেন তাঁরা, তা নিয়েই থেকে যাচ্ছে সন্দেহ। নিজে না বিক্রি করলেও, মৃত্যুর পরে সন্তানদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে তাঁর এই সাম্রাজ্যের পতন যেন অনিবার্যই…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন নিগ্রহের শিকার অধিকাংশ মহিলাই, জানাচ্ছে সমীক্ষা