অন্য মানুষের হয়ে লাইনে দাঁড়ানোই পেশা এই যুবকের!

সকাল হতেই তিনি লাইনে গিয়ে দাঁড়ান। কোনোদিন ব্যাঙ্কের লাইনে। কোনোদিন কোনো টিকিট কাউন্টারের। কয়েক ঘণ্টা এক লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ শেষ করে আবার চলে যান অন্য কোনো লাইনে। সারি সারি মানুষের ভিড়ে এক-পা এক-পা করে এগিয়ে যান লক্ষ্যের দিকে। আসলে লন্ডন (London) নিবাসী ফ্রেডি বেকিটের (Freddie Beckitt) এটাই পেশা। হ্যাঁ, পেশাই। রোজগারের মাধ্যম। আর তার চেয়েও আশ্চর্যের কথা, এই পেশা তিনি বেছে নিয়েছেন স্বেচ্ছায়। সম্ভবত সারা পৃথিবীতে তাঁর সহকর্মী আর কেউ নেই। শুধু লাইনে দাঁড়িয়েই ফ্রেডির দৈনিক আয় কোনো কোনো দিন ১৬০ পাউন্ড বা ১৬ হাজার টাকা ছুঁয়ে ফেলে।

বিগত ৩ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন ফ্রেডি। আসলে তখনই তিনি বুঝেছিলেন, তাঁর সবচেয়ে বড়ো গুণ হল ধৈর্য। সাধারণ মানুষের মতো অল্পেতেই অধৈর্য হয়ে ওঠা তাঁর স্বভাব নয়। আর তাই এটাই তাঁর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জীবিকা। এর আগে ঐতিহাসিক কল্পকাহিনি লিখতেন ফ্রেডি। কিছুটা জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন। একদিন সেইসব ছেড়ে দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর এই অভিনব পেশার বিজ্ঞাপন দিয়ে বসলেন। অনেকেই অবাক হয়েছিলেন এমন বিজ্ঞাপন দেখে। ফ্রেডি জানান, যাঁরাই সময়ের অভাবে বা কোনো কারণে লাইনে দাঁড়াতে পারবেন না, তাঁদের হয়ে তিনিই সেই কাজ করে দেবেন। সন্দেহ নিয়েই কয়েকজন তাঁকে মোতায়েনও করেন। এভাবেই ধীরে ধীরে গোটা লন্ডন শহরে ছড়িয়ে যায় তাঁর নাম। এখন অবশ্য বেশ হিসাব করেই কাজের বায়না নিতে হয় তাঁকে।

ঘণ্টায় ২০ পাউন্ড করে মজুরি নেন ফ্রেডি। কোনোদিন ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন না। সারাদিনের মতো কাজ পেয়ে গেলে তাই ১৬০ পাউন্ড তাঁর দৈনিক আয়। তবে রোজ সমান পরিমাণ কাজ পান না। মোটের উপর রোজগার বেশ ভালোই, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। হবে নাই বা কেন? তাঁর মক্কেলরা যে সবাই মূলত লন্ডনের প্রথম সারির ধনী ব্যক্তি। সারাদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে তাঁদের পক্ষে লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না। তবে অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষদের হয়েও কাজ করেন ফ্রেডি। সেক্ষেত্রে তাঁদের সামর্থ্যের কথা ভেবে অনেক সময় কম মজুরিতেও কাজ করেন।

শীতকালে বাজার কিছুটা মন্দা থাকে। তবে তার মধ্যেও কাজ এলে তিনি বসে থাকেন না। লন্ডনের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেলেও তাঁর মধ্যে কোনো চাঞ্চল্য দেখা যায় না। তবে গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকভাবেই রোজগার বেশি হয়। আর গ্রীষ্মকালেই তো নানা সামাজিক অনুষ্ঠান, খেলার আসরও বসে। সেসবের টিকিটের চাহিদাই থাকে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি অন্য নানা কাজের বায়নাও নিয়ে থাকেন ফ্রেডি। তার মধ্যে পোষ্য সামলানো, বাগান পরিষ্কার, ঘর রং করা ইত্যাদি নানাকিছুই আছে। তবে সেইসব কাজ অনেকেই করেন। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে মানুষের লাইনে অন্য মানুষের প্রতিনিধিত্বের জীবিকা সত্যিই অভিনব।

আরও পড়ুন
হুইলচেয়ারে ২৪ ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার পাড়ি, গিনেস রেকর্ড পুরীর ব্যক্তির

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বহনযোগ্য মেজি ও ভেলাঘর, ঐতিহ্য বাঁচাতে উদ্যোগ গুয়াহাটির ব্যক্তির