ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষাক্ত জল ফেলা হবে সমুদ্রে, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত জাপানে

প্রায় এক দশক ধরে অনিশ্চিত হয়ে আছে পরিত্যক্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ। আর কোনোদিন সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়, সে-কথা বলাই বাহুল্য। তবে সুনামির সময় নিউক্লিয়ার ট্যাঙ্কে আটকে পড়া জল কী করা হবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বের কোনো মীমাংসা হয়নি। তবে মঙ্গলবার জাপান সরকার প্রায় স্পষ্ট করে দিল, সমস্ত বিতর্ক সত্বেও সমুদ্রের জলেই ফেলে দেওয়া হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই বিষাক্ত জল। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন জাপানের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সারা বিশ্বের পরিবেশকর্মীরাও সরব এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।

২০১১ সালের সুনামিতে ভেঙে পড়ে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেইসঙ্গে সমুদ্রের জল আটকা পড়ে যায় ফুকুশিমার নিউক্লিয়ার ট্যাঙ্কে। আজও সেই জলের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনার পরেই রিয়্যাক্টরটি নতুন করে চালু করার জন্য বিশেষ কমিটি তৈরি করেছিল টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন। তবে ইঞ্জিনিয়াররা সকলেই জানিয়ে দিয়েছেন, কোনোভাবেই এই কেন্দ্র পুনর্গঠন সম্ভব নয়। তবে এর মধ্যেই নিউক্লিয়ার ট্যাঙ্ক থেকে তেজষ্ক্রিয় জল ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের অঞ্চলে। সেইসঙ্গে সমুদ্র থেকেও নতুন করে জল প্রবেশ করছে একটু একটু করে। এই অবস্থায় ট্যাঙ্কটি সম্পূর্ণ নিষ্কাশন করে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। সমস্যা শুধু এই যে, তেজষ্ক্রিয় জল যেখানেই ফেলা হবে সেখানেই বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হবে।

সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই জাপান সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাই বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ শিকারের উপরেই যাঁদের জীবিকা নির্ভরশীল, সেই মৎস্য ব্যবসায়ীরাও সরকারের বিরোধিতা করছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদি সুগা জানিয়েছেন, জল প্রক্রিয়াকরণ করে তবেই সমুদ্রে ফেলা হবে। ফলে বাস্তুতুন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অবশ্য পরমাণু বিজ্ঞানীরা সুদার এই বক্তব্য সমর্থন করছেন না। তাঁদের মতে, বিশেষ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জলের তেজষ্ক্রিয়তা কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু কোনোভাবেই তা শূন্যতে পৌঁছয় না। ফলে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হবেই। তবে তেজষ্ক্রিয়তার পরিমাণ কতটা, তার উপর ক্ষতির পরিমাপ নির্ভর করছে। সরকার সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জনসমক্ষে নিয়ে এলে বিতর্কের মীমাংসার রাস্তা পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এমন কোনো তথ্য পরিবেশন করা হয়নি বলে জানিয়েছে জাপান সরকার।

এক দশক ধরে একটু একটু করে আশেপাশের অঞ্চলে বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এবার তার নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। তবে সবদিক বিবেচনা করেই সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আরও পড়ুন
চের্নোবিলের তিন দশক আগেই ঘটেছিল বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক দুর্ঘটনা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পারমাণবিক অস্ত্রে ‘না’, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ৫০ দেশের