ঠিক দশ বছরের আগের কথা। ১১ মার্চ। শুক্রবার। আর পাঁচটি দিনের মতোই স্বাভাবিক ছন্দে শুরু হয়েছিল দিনটা। তারপর হঠাৎ কেঁপে উঠল গোটা দেশ। রিখটার স্কেলে তখন জানান দিচ্ছে কম্পনের মাত্র ৯। তবে শুধু সেখানেই থেমে থাকেনি প্রকৃতির ধ্বংসলীলা। আছড়ে পড়ল সুনামি। আর তার তোড়েই ভেসে গেল আস্ত হংসু দ্বীপ। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল জাপানের ভূ-ভাগ।
দশ বছর পেরিয়ে এসেও জাপানে এখনও তরতাজা সেই বিপর্যয়ের স্মৃতি। বৃহস্পতিবার সুনামি বিধ্বস্ত ফুকুশিমার জড়ো হলেন জাপানের সাধারণ মানুষ। জলের স্রোতে তলিয়া যাওয়া আত্মীয় এবং প্রিয়জনদের জন্য তাঁরা ফুল রেখে এলেন সমুদ্র উপকূলে। পালিত হল শোকসভা। সম্রাট নুরুহিতো কিংবা প্রধানমন্ত্রী সুগাও বিপর্যয়ের সময় স্মরণ করে ঠিক দুপুর ২ টো ৪৬ মিনিটে অংশ নিলেন নীরবতা পালনে।
২০১১ সালের সেই সুনামিতে জাপানে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। গৃহহীন হয়েছিলেন প্রায় ৫ লক্ষ নাগরিক। দশ বছর পেরিয়ে এসেও যাঁদের মধ্যে ৪০ হাজার মানুষ আজও ফিরতে পারেননি তাঁদের সাবেক বাসস্থানে। আর বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র আজও ছড়িয়ে চলেছে তার তেজস্ক্রিয়তা। যে কারণে রেল কিংবা অন্যান্য পরিকাঠামো পুনর্নির্মিত হলেও আজও মানুষ ফিরতে পারেনি সেখানে।
গতকালের শোকসভায় সেই অসহায়তার কথাই যেন মনে করিয়ে দিল জাপান। আসন্ন জুলাইয়ে জাপানের টোকিও শহরে আয়োজিত হতে চলেছে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক। হাতে মাত্র আর দু’সপ্তাহ সময়। তারপর শুরু হবে অলিম্পিকের ‘টর্চ রান’। বৃহস্পতিবার স্মৃতিসৌধে শোক পালনের সময় প্রধানমন্ত্রী সুগা ঘোষণা করেন, সেই অনুষ্ঠান শুরু হবে ফুকুশিমা থেকেই। মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও, ১০ বছর আগের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা এখনও করে উঠতে পারেনি জাপান— সেই বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হবে বিশ্ববাসীর কাছে।
আরও পড়ুন
৫০ বছর আগের গানেই জাপানকে নতুন করে চিনছে পাশ্চাত্য
তবে শুধু ফুকুশিমা কিংবা উত্তর জাপানের সুনামি-বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলিই নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও অন্ধকার দিবস হিসাবে পালিত হল ১১ মার্চ। দুর্যোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হল জাপান-জুড়ে। লক্ষ্য, এই ধরণের বিপর্যয় আগামী দিনে আঘাত হানলেও যেন তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে সাধারণ মানুষ…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জাপানের ক্যাবিনেটে শপথ নিলেন ‘একাকিত্বের মন্ত্রী’, লক্ষ্য আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণ