জীব সংরক্ষণ এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের ফিরিয়ে আনতে দিশা দেখাচ্ছে হিমায়িত চিড়িয়াখানা

আজ থেকে ঠিক পঞ্চাশ বছর আগের কথা। ১৯৭২ সালে এক অদ্ভুত উদ্যোগ নিয়েছিলেন মার্কিন প্রাণীবিদ কার্ট বেনির্স্কে (Kurt Benirschke)। বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় এবং বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের চামড়া এবং কোশের নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করেন তিনি। না, মৃত প্রাণীর স্টাফ করা চামড়া নয়। জীবন্ত প্রাণীদের চামড়ার সজীব ত্বকের কোশে হিমায়িত করে সংগ্রহ করা শুরু করেন তিনি। সেসময় অনেকেই তাঁর এই উদ্যোগকে পাগলের কর্মকাণ্ড বলেই মনে করেছিলেন। তবে অর্ধশতাব্দী পরে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষভাবে কার্যকরী হয়ে উঠেছে বেনির্স্কের সেই সংগ্রহই। 

‘ফ্রোজেন জু’ বা ‘হিমায়িত চিড়িয়াখানা’ (Frozen Zoko)। হ্যাঁ, বেনির্স্কের সেই সংগ্রহশালা আজ এই নামেই পরিচিত। অবশ্য প্রাথমিকভাবে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপকের এই সংগ্রহশালা ছিল তাঁর নিজের বাড়িতেই। পরবর্তীতে তিনি সান দিয়েগো চিড়িয়াখানায় বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি করে সেখানেই স্থানান্তরিত করেন গোটা সংগ্রহশালাটি। মজার বিষয় হল, বেনির্স্কে নিজে জানতেন না এই সংরক্ষিত কোশগুলি ঠিক কী কাজে ব্যবহৃত হতে পারে পরবর্তী ক্ষেত্রে। তাঁর অভিমত ছিল, গবেষণায় কোনো না কোনোভাবে সেগুলি সাহায্য করবে আগামী প্রজন্মকে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া প্রজাতিদের কোশের নমুনা সংরক্ষণ জীবিত ইতিহাসেরই সমতুল্য। জীবদ্দশায় ক্রায়োব্যাঙ্কে প্রায় ১২২০ প্রজাতির দশ হাজারেরও বেশি পৃথক পৃথক প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন বেনির্স্কে। 

১৯৯৬ সালে তাঁর এই সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই খুলে যায় জীববিজ্ঞান এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এক নতুন দিগন্ত। হিমায়িত কোশকে ব্যবহার করেই ক্লোনিং পদ্ধতিতে জন্ম দেওয়া হয় একটি ভেড়াকে। ‘ডলি’ নামের সেই ভেড়াটিই ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রথম কৃত্রিমভাবে প্রজনন করানো কোনো প্রাণী। পরবর্তীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে ক্লোনিং-এর পদ্ধতিও। ব্ল্যাক ফুটেট ফেরেট, ভারতীয় গৌড়, এশিয়ান বাইসন, প্রজেওয়ালস্কি ঘোড়া— এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে এই চার প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে পুনরুদ্ধার করেছেন গবেষকরা। 

তবে বর্তমানে শুধু সান দিয়েগোর চিড়িয়াখানাই নয়, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড এমনকি আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তেও গড়ে উঠেছে এই একই ধরনের হিমায়িত ক্রায়োব্যাঙ্ক। নতুন উদ্যোগে সংরক্ষিত হচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন্ত কোশের নমুনা। সেইসঙ্গে চলছে গবেষণাও। পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদেরও নতুন করে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছেন প্রাণী গবেষকরা। এই গোটা প্রক্রিয়ার নেপথ্যে আজও নীরবেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন কার্ট বেনির্স্কে…

আরও পড়ুন
মানুষ ছাড়াও হাসতে অভ্যস্ত ৬৫টি প্রজাতির প্রাণী! জানাচ্ছে গবেষণা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শুধু মানুষই নয়, অন্য প্রজাতিকে বিলুপ্তিতে ঠেলে দেয় এই 'ভারতীয়'রাও!