পিয়ন থেকে অধ্যাপক : দারিদ্রকে হারিয়ে রূপকথার সাফল্য বিহারের ব্যক্তির

কলেজের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে চিঠি পৌঁছে দেওয়া, নোটিস বোর্ডে নোটিস ঝোলানো, কখনও আবার লাইব্রেরিতে রাখা বই ঝাড়পোছ করা— খানেক আগেও এই কাজই করতে হত তাঁকে। তবে কঠোর পরিশ্রম আর সংকল্পই সাফল্য এনে দিতে পারে যে কাউকে, সেটাই প্রমাণ করে দেখালেন বিহারের ৪২ বছর বয়সি কমল কিশোর মণ্ডল (Kamal Kishore Mondal)। দীর্ঘ দেড় দশক পিয়নের কাজ করে, এবার অধ্যাপনা শুরু করলেন তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Tilka Manjhi Bhagalpur University)। 

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। পিয়ন থেকে অধ্যাপক। এ যেন এক রূপকথার জার্নি। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় কলেজের গণ্ডি পেরনোর পরেই পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। ২০০৩ সালের কথা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভের বছর খানেকের মধ্যেই  মুঙ্গেরের আরডিডিজে কলেজে নাইট গার্ড হিসাবে কর্মজীবন করেন কমল কিশোর। মাইনে সামান্যই। তবে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা আর পরিবারের হাল ধরতে বাধ্য হয়েই এই পেশাকে বেছে নিতে হয়েছিল তাঁকে। 

২০০৮ সালে এই কলেজ থেকেই তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় ভাগলপুরের তিলকা মাঝি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাইট গার্ড থেকে পদোন্নতি হয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে পিয়নের চাকরি জোটে তাঁর। বেতনে যে খুব পরিবর্তন এসেছিল, তেমনটা নয়। তবে এই স্থানান্তরই শাপে বর হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কাছে। বদলে দেয় ভাগ্য। 

ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দেখেই নতুন করে অনুপ্রাণিত হন তিনি। আবার শুরু করেন পড়াশোনা। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকরাও। কাজ করতে করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০০৯ সালে আম্বেদকরের চিন্তন এবং সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ করেন কমল কিশোর। তারপর শুরু হয় গবেষণা। ২০১৭ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর শুরু করেছিলেন ‘নেট’ অর্থাৎ ‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট’ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। ২০২০ সালে নেট পাশ করার পর বিহার স্টেট ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনে সহকারী অধ্যাপকের পদের জন্য আবেদন করেন তিনি। 

গত মে মাসেই ঘোষিত হয়েছিল সেই পরীক্ষার ফলাফল। হ্যাঁ, সফল প্রার্থীদের তালিকাতেই ছিল তাঁর নাম। কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে অধ্যাপনার জন্য পাঠানো হবে, তা জানানো হয়নি সে-সময়। চলতি মাসের শুরুতে হাতে নিয়োগপত্র পেয়ে রীতিমতো চমকে ওঠেন কমল কিশোর। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিন পিয়নের চাকরি করে আসছেন, এবার সেখানেই অধ্যাপনা করতে হবে তাঁকে। এ যেন এক অদ্ভুত সমাপতন। 

দারিদ্র প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে কমল কিশোরের এই সাফল্য রীতিমতো অবাক করার মতোই। বিহারের অধ্যাপকের এই সাফল্যের কাহিনি এখন অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে হাজার হাজার তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের… 

Powered by Froala Editor