Powered by Froala Editor
সেলসপার্সন থেকে জিঙ্গল-গাইয়ে হয়ে বলিউড - আশ্চর্য এক জীবনের গল্প
১/৯
‘ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’— নব্বইয়ের দশকে এই গানই খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল তাঁকে। এনে দিয়েছিল অমরত্ব। কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ— কেকে। গতকাল কলকাতার মঞ্চেই বিদায় নিলেন ভারতীয় সঙ্গীতজগতের অন্যতম তারকা। শুধু ইন্ডিপপই নয়, স্যাড সং থেকে মেলোডি কিংবা রক— সঙ্গীতের প্রতিটা আঙ্গিককেই সাবলীলভাবে কণ্ঠে ধরেছেন কেকে। কিন্তু এই বৈচিত্রময়তা শুধুই কি তাঁর গানে? আদ্যোপান্ত রঙিন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও। এক ঝলক ফিরে দেখা যাক তাঁর জীবনের তেমনই কিছু গল্প…
২/৯
বলিউড তো বটেই, বিগত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গীতজগতে রাজত্ব করেছেন কেকে। অথচ, শুনলে অবাক হতে হয়, সঙ্গীতের কোনো প্রথাগত শিক্ষাই ছিল না কেকে-র। সঙ্গীতের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসা নিজের মাকে দেখেই। কাজের ফাঁকে গুন গুন করে মালায়ালি ভাষায় গান গাইতেন তাঁর মা। আর সুযোগ বুঝে সেসব গান লুকিয়ে রেকর্ড করে রাখতেন তাঁর বাবা। এইসব গানের টেপ রেকর্ডই ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুনতেন কেকে। পেতেন অনুপ্রেরণা। স্বপ্ন দেখতেন সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার। মায়ের গলার অনুকরণ করেই কেকে গাওয়ার চেষ্টা করতেন নানান বলিউডের গান। কিশোরবেলায় এভাবেই তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন কেকে।
৩/৯
তখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র কেকে। প্রথমবার মঞ্চে গান করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে সেদিন নিজের স্বকীয় ভঙ্গিতে গেয়েছিলেন ‘রাজা রানি’ সিনেমার ‘যব আন্ধেরা হোতা হ্যায়’। সেদিন শুধু অগণিত হাততালিই পাননি তিনি, গোটা থিয়েটার উঠে দাঁড়িয়ে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছিল ক্লাস বারোর কিশোরকে। কেরিয়ারের মধ্যগগনে পৌঁছেও কেকে মনে করতেন, সেটাই ছিল তাঁর টার্নিং পয়েন্ট।
৪/৯
তবে কলেজ জীবন শেষ হওয়ার পরেই ফুরিয়ে যেতে বসেছিল কেকে-র তারকা হওয়ার স্বপ্ন। সে-সময় কাঁধে দায়িত্বের ভার যে কম ছিল না তাঁর। স্কুলজীবনের প্রেয়সীকে বিবাহ, সংসারের ভারগ্রহণ— এসব কিছুই ভাবিয়ে তুলেছিল তাঁকে। গান গেয়ে কি আর সংসার চালানো যায়? তাই চাকরির অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন কেকে। দিল্লির একটি সংস্থায় কাজ নিয়েছিলেন সেলসপার্সনের।
৫/৯
মাস ছয়েকের মধ্যেই এই কাজ নাজেহাল করে তুলেছিল তাঁকে। তবে সেই দুঃসময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ান তাঁর স্ত্রী এবং বাবা। তাঁদের অনুপ্রেরণাতেই আবার প্রত্যাবর্তন সঙ্গীতজীবনে। কি-বোর্ড কিনে শুরু হয় গানের অনুশীলন। দুই বন্ধু শিবানী কাশ্যপ এবং শৈবাল বসুর দৌলতে জিঙ্গেল গাওয়ার সুযোগও মেলে দিল্লিতে। সেটা ১৯৮৫ সাল। আনুষ্ঠানিকভাবে সেখান থেকেই শুরু তাঁর গানের কেরিয়ার।
৬/৯
মাত্র বছর সাতেকের মধ্যে সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার জিঙ্গেলে গলা দিয়েছেন কেকে। তবে গানের জগতে ঢুকে পড়লেও সঙ্গীত দুনিয়ায় আয় নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না তাঁর। পরিচালক রণজিৎ বারোট বেতন জিজ্ঞেস করায় মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন কেকে। হাতের পাঁচ আঙুল দেখিয়ে রণজিৎ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তাঁর প্রাপ্য সাম্মানিকের ব্যাপারে। কেকে ভেবেছিলেন প্রতি গানের জন্য হয়তো বেতন পাবেন পাঁচশো টাকা। তবে তাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে হাতে চেক এসে পৌঁছালে রীতিমতো অবাক হয়ে যান কেকে।
৭/৯
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দিল্লি ছাড়েন কেকে। পাড়ি দেন মুম্বাইয়ের ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে খুব কিছু সহজ ছিল না সেই লড়াই। বলিপাড়ায় সেভাবে কোনো পরিচিত ব্যক্তি নেই তাঁর। সম্বল বলতে, নিজের গাওয়া কিছু জিঙ্গেলস। সেই জিঙ্গেলই মুগ্ধ করে খোদ এআর রহমানকে। ‘কল্লুরি সালে’ গানে তাঁকে গলা দেওয়ার সুযোগ দেন কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক। না, হতাশ করেননি কেকে। তাঁর গলায় সেই গানই হয়ে উঠেছিল সুপার হিট।
৮/৯
ইন্ডিপপ-এর আরও এক তারকা পলাশ সেন-এর উত্থানের নেপথ্যেও রয়েছে কেকে-র অবদান। কেকে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে, শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল দিল্লির জিঙ্গেল ইন্ডাসট্রিতে। সেই সুযোগটাই নিয়েছিলেন ইউফোরিয়ার পলাশ সেন। তখন কেকে-র বিকল্প খুঁজছে দিল্লির জিঙ্গেল ইন্ডাস্ট্রি। পেশায় চিকিৎসক হলেও, কাজের শেষে পরিচয় গোপন করেই সেখানে হাজির হন পলাশ। বাকিটা ইতিহাস। ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনা প্রকাশ্যে এনে কেকে-কে ধন্যবাদও জানান ইউফোরিয়ার ফ্রন্টম্যান।
৯/৯
তবে আড়াই দশক ধরে গোটা ভারতজুড়ে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা পেলেও, কেকে-র দুঃখ ছিল তাঁকে সেভাবে চেনেন না অনুরাগীরা। হ্যাঁ, সমীক্ষাও বলছে সেই কথা। অন্তত প্রথম দশক পর্যন্ত তাঁর ৯০ শতাংশ গানের ভক্তই চিনতেন না কেকে-কে। লাইভ সঙ্গীতের মঞ্চেই তাঁর মুখশ্রীর সঙ্গে পরিচিত হতেন বেশিরভাগ মানুষ। আক্ষরিক অর্থেই কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন কেকে। ‘মেরে আওয়াজ হি পেহেচান হে’ গানটির মতোই…