একজনের জন্ম কুমিল্লা শহরে, আরেকজনের মুর্শিদাবাদে। দুজনে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ইংরেজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাচ্ছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের আশ্চর্য সমাপতনে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো এক বাঁকে দেখা হয়ে গেল দুজনের। ক্ষণস্থায়ী সেই সাক্ষাৎ। জীবনে নয়, মৃত্যুতে পূর্ণতা পেল তাঁদের বন্ধুত্ব। কারা সেই দুই বন্ধু? বিপ্লবী তারিণীপ্রসন্ন মজুমদার ও নলিনীকান্ত বাগচী।
তারিণীপ্রসন্নের জন্ম ১৮৯২ সালের ১৯ মে কুমিল্লা শহরে। অল্প বয়সেই বিপ্লবীদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে বহুদিন তাঁকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছে। একবার কুমিল্লায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য একটি বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। সেবার পুলিশকে বোকা বানিয়ে তিনি অস্ত্রসমেত পালিয়ে যেতে সফল হন। তারপরই চলে আসেন কলকাতার ভবানীপুরে। এখানেও হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও পুলিশ তারিণীপ্রসন্নর হদিশ পেল না। পালাতে গিয়ে বাড়ির দোতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে ভেঙে গেল তাঁর পা। ভাঙা-পা নিয়েই ভিখারির ছদ্মবেশে পুলিশ-বেষ্টনী ভেঙে তিনি পাড়ি দেন ঢাকা শহরে। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা হবে নলিনীকান্ত বাগচীর।
নলিনীকান্তর জন্ম ১৮৯৬ সালে মূর্শিদাবাদে। স্কুলে পড়াকালীনই বৈপ্লবিক কাজকর্মের জন্য পুলিশের নজরে পড়ে যান। ফলে কলেজের পড়া শেষ করার জন্য তাঁকে পাটনায় চলে যেতে হয়। তারপর শুরু হয় বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা। গৌহাটিতে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে পায়ে হেঁটে চলে আসেন কলকাতায়। শরীরে তখন বাসা বেঁধেছে বসন্ত রোগ। অচেনা শহরে অসুস্থ শরীরে তিনি ময়দানে পড়ে রইলেন। কোনোরকমে এক বিপ্লবী বন্ধুর সাহায্যে সামান্য সুস্থ হয়েই পাড়ি দিলেন ঢাকায়।
১৯১৮ সালের ১৫ জুন—ঢাকা শহরের ফলতাবাজার এলাকার চৈতন্য দে-র বাড়িতে আত্মগোপন করে রয়েছেন দুই বিপ্লবী। কিন্তু খবর চাপা রইল না। ভোররাতে পুলিশ বাড়ি ঘিরে ফেলল। একজনের পা ভাঙা, আরেকজন সদ্য উঠেছেন বসন্ত থেকে। দুই ক্লান্ত বিপ্লবী শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশমাতার ঋণশোধ করার জন্য তৈরি হলেন। অসম লড়াইয়েও তাঁরা একজন পুলিশকে হত্যা করেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। কিন্তু পালাতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারিণীপ্রসন্ন। সাংঘাতিক আহত হয়ে নলিনীকান্ত গ্রেপ্তার হন। ঢাকা জেলে পরদিনই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
আরও পড়ুন
দেশের জন্য লড়েও ছাড়তে হয়েছিল ভিটে, দিনাজপুরের ‘অবজ্ঞাত’ স্বাধীনতা সংগ্রামীর গল্প
স্বাধীনতার লড়াই এভাবেই মিলিয়ে দিয়েছিল দুই বিপ্লবীকে। মৃত্যুতেই শুরু হল বন্ধুত্বের পথচলা।
আরও পড়ুন
স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিশেষ পডকাস্ট সিরিজ, আইএনএ-র কাহিনি দিয়ে যাত্রা শুরু
তথ্যসূত্র : আন্তর্জাল
সংসদ বাংলা চরিতাভিধান, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত
Powered by Froala Editor