পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে অচিরাচরিত শক্তি উৎসের দিকে ঝুঁকছে অনেক দেশই। চলতি কপ-২৬ সম্মেলনেও একই সুপারিশ করা হয়েছে বারবার। তবে অচিরাচরিত শক্তি মানেই কি সম্পূর্ণ নিরাপদ? সম্প্রতি ফ্রান্সের (France) আদালতের রায় যেন সেই প্রশ্নটাই তুলে দিল নতুন করে। এক দম্পতির দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে ‘উইন্ড টারবাইন সিন্ড্রোম’ (Wind Turbine Syndrome) নামক রোগকে স্বীকৃতি দিল আদালত। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে পরিবেশকর্মীদের মধ্যে। লোকমুখে প্রচলিত রোগ ‘উইন্ড টারবাইন সিন্ড্রোম’। কিন্তু এর আগে কোনো স্বীকৃতি ছিল না তার। অন্যদিকে এক অংশের পরিবেশকর্মীর মতে, এই রায় সত্যিই ঐতিহাসিক। পরিবেশ সুরক্ষার অর্থ যে শুধু কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা নয়, বরং মানুষের সুস্থ জীবনকে রক্ষা করা – সেটাই আবার মনে করিয়ে দিল এই রায়।
২০০৮ সালে ফ্রান্সের ফ্রনট্রিউ কমিউনে পাশাপাশি ৬টি উইন্ড টারবাইন বা হাওয়া কল বসানো হয়। এর ঠিক ৭০০ মিটার দূরেই বেলজিয়ান দম্পতি ক্রিস্টেল এবং লুক ফোকেয়ার্টের বাড়ি। প্রথম ৫ বছর অবশ্য কোনো অসুবিধা বোধ করেননি তাঁরা। তবে ২০১৩ সাল থেকেই দুজনের নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় সারাদিন ধরেই মাথা যন্ত্রণা, রাতে ঘুম না হওয়া, সঙ্গে বমি বমি ভাব – এমনই নানা উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। বছর দুয়েক যন্ত্রণা সহ্য করে শেষে আদালতের দ্বারস্থ হলেন তাঁরা। ইতিমধ্যে কিছুদিন বাইরে কাটিয়ে দেখেছেন, সেখানে শরীরে কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে এই সমস্ত উপসর্গের পিছনে যে হাওয়া কলের ঘরঘরানি শব্দ আর ক্রমাগত জ্বলতে-নিভতে থাকা আলোই দায়ী, তাতে সন্দেহ ছিল না তাঁদের।
২০১৮ সালে ফোকেয়ার্ট দম্পতির মামলা খারিজ করে দেয় নিম্ন আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবার আপিল করেন তাঁরা। অবশেষে মিলল বিচার। পুণর্বাসনের পাশাপাশি তাঁদের অন্তত ১ লক্ষ ইউরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাওয়া কলের দায়িত্বে থাকা দুই কোম্পানিকে। তবে যেহেতু উইন্ড টারবাইন সিন্ড্রোম বলে কোনো রোগকে চিকিৎসকরা স্বীকৃতি দেননি, তাই আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। অনেকের মতে, এই রোগ আসলে একটি সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক রোগ। বায়ুশক্তি বিরোধী প্রচারের কারণেই এই ধরনের আতঙ্ক মানুষকে গ্রাস করছে। আদালতের এই রায় সেই আতঙ্কই উস্কে দেবে। অন্যদিকে আরেক দল পরিবেশকর্মী দীর্ঘদিন ধরেই হাওয়া কলের কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যার বিষয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। এই রায় যে আগামীদিনে একটি মাইলস্টোন হয়ে থেকে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই কারোরই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘রিটায়ার্ড হাসবেন্ড সিনড্রোম’! অদ্ভুত রোগে ভুগছেন প্রথম বিশ্বের মহিলারা