দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার পণ করেছিলেন তিনি। স্ত্রী আর সন্তানকে রেখে চলে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রাঙ্গণে। পরে জীবিত অবস্থায় আর ফেরেননি ঘরে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশের জন্য লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম মোল্লা। কিন্তু আজ কোনো স্বীকৃতিই মেলেনি তাঁর পরিবারের। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর লেখা চিঠিও অবস্থা ফেরাতে পারেনি স্ত্রী আমেনা বিবির। আজও দোরে দোরে ঘুরছেন তিনি।
আরও পড়ুন
স্বাধীনতার জন্য তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক, আজ জুতো সেলাই করে পেট চালান মুক্তিযোদ্ধা
তখন বিয়ের মাত্র কয়েক বছরই অতিক্রান্ত হয়েছে। সালটা ১৯৭১। সংসারে এসেছে সদ্যোজাত কন্যাসন্তান। এর মধ্যেই সাতক্ষীরার কোদন্ডা গ্রামের আবুল কাসেম মোল্লা জড়িয়ে পড়লেন দেশের মুক্তির সংগ্রামে। ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’! বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রামের আরও কয়েকজন যুবককে নিয়ে যোগ দিলেন মুক্তিযুদ্ধে। সেটাই শেষ দেখা স্ত্রী আমেনা বিবির সঙ্গে। ওই বছরই কোদন্ডা সড়কের কালভার্টের পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে আবুল কাসেমকে গুলি করে মারে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী। সেখান থেকেই দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন স্ত্রী আমেনা বিবি। নিজের হাতেই দাফন করেন তাঁকে।
আরও পড়ুন
বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা গোটা বাংলাদেশ, খুলনার তখনও লড়ছে স্বাধীনতার জন্য
নিজের বলে সেরকম কিছুই ছিল না তাঁদের। স্বামী শহিদ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে চিঠি লেখেন। মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের কথা, পরিবারের দুর্দশার কথা- সমস্তটা জানান তাঁকে। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সাড়াও মেলে। সাহায্যার্থে পরিবারকে ২ হাজার টাকা ও একটি চিঠি দেন। আজ, সেই চিঠিই সম্বল আমেনা বিবির।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং কলকাতা— মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল
আবুল কাশেমের অন্যান্য জীবিত সহযোদ্ধারা সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন অনুদান, সরকারি ঘর। কিন্তু আমেনা বিবিদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্বীকৃতিও মেলেনি। কোনোরকমে মেয়ে-জামাইয়ের ঘরে আছেন তিনি। তবে এখনও সঙ্গে আছে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই চিঠিটি। যদি কিছু সুরাহা হয়, কেউ যদি দেখেন, স্বামীর স্বীকৃতি দেন- সেই আশাতেই সব জায়গায় যান আমেনা বিবি। হাজার হোক, স্বামী তো মুক্তিযোদ্ধা। প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্য…
ছবি - নিউজবাংলা২৪