করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় লকডাউন যেমন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, তেমনই এর জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে দিন আনি দিন খাই মানুষদের। এর মধ্যে লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে অবধি বাড়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বহু মানুষের কপালে। উপার্জনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ। পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেবেন কী করে, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। অনেক এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ পৌঁছে দিচ্ছে রান্না করা খাবার, আবার কেউ চাল, ডাল, তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। তবে কাউন্সিলর তপন দাসের উদ্যোগ বেশ অভিনব। চাল, ডাল নয়; দুর্গত মানুষদের জন্য বিনামূল্যের সবজি বাজার তৈরি করেছেন তিনি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গারুলিয়া পৌরসভার ৭টি ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে ৭০০ ঘর মানুষের বাস। তাঁদের অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। লকডাউনের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলর তপন দাস তৈরি করলেন তাঁর এই অভিনব বাজার। প্রতি রবিবার গারুলিয়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এই বাজার বসবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সেখান থেকে সারা সপ্তাহের সবজি সংগ্রহ করতে পারবেন মানুষ। পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসাব করে তাঁদের হাতে ১৪ রকমের সবজি তুলে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে মাথাপিছু দুটি করে ডিম।
লকডাউনের সময় সরকারি ও বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় রেশন সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শাকসবজির জোগানের কথা ভাবেননি কেউই। তপন দাস তাই ভাবলেন এই অভিনব উদ্যোগ নেওয়ার কথা। লকডাউনের সময়সীমা বাড়ার কথা জানতে পেরেই স্থানীয় কিছু এনজিও এবং পুঁজিপতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। তারপর তাঁদের সাহায্য নিয়েই তৈরি করে ফেললেন এই বাজার। স্থানীয় রেশন অফিসের তালিকা থেকে ২৫০টি দরিদ্র পরিবারকে চিহ্নিত করলেন, যাঁদের হাতে এই সবজি তুলে দেওয়া হবে।
আপাতত একদিন বসেছে এই বাজার। ২৫০টি পরিবারের সদস্যরা এসে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সবজি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন। কাউন্সিলরের এমন উদ্যোগে খুশি এলাকার মানুষরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে পরিমাণে সবজি দেওয়া হচ্ছে তাতে এক সপ্তাহ চলে যায়। মানুষের অভিনন্দন পেয়ে খুশি কাউন্সিলর তপন দাস নিজেও।
আপাতত ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা স্থির করা হয়েছে। তবে কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেকথা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন এই বাজার চলবে বলে জানিয়েছেন তপনবাবু। মানুষের নিরাপত্তার জন্য যে লকডাউন তার প্রভাবে যাতে মানুষকেই বিপাকে পড়তে না হয়, সেই দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকেই। তপনবাবুর এই উদ্যোগ তাই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।