৫৮ বছর পর ফিরল আলজিরিয়ার শহীদদের মাথার খুলি, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সুর ফ্রান্সে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির একটি, আলজিরিয়ার ৮ বছরের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৩২ বছরের ফরাসি আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন সেখানকার মানুষ। আর সেই লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে অসংখ্য মৃত্যু এবং রক্তপাত। কিছুদিন আগেও প্যারিসের জাদুঘরে গেলে দেখতে পাওয়া যেত সেইসব শহীদের মাথার খুলি। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলেও এই করোটিগুলিকে ঠিক পুরস্কারের মতো রক্ষা করে এসেছে ফ্রান্স সরকার। তবে এবার সেই নৃশংস ইতিহাসে যবনিকা পড়ল। আলজিরিয়ার শহীদদের দেহাংশ স্বদেশে ফিরিয়ে দিল ফ্রান্স সরকার।

২০১৭ সালে আলজিরিয়ার সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তখনই সেদেশের শহীদদের দেহাংশ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে আলজিরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে সেই দেহাংশ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ইতিমধ্যে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মনেও যথেষ্ট অনুতাপ তৈরি হয়। গতবছর ম্যাক্রন আবারও ঔপনিবেশিকতাকে ঐতিহাসিক ভুল বলে উল্লেখ করেন। আর এই সূত্রেই শেষ পর্যন্ত সমস্ত সরকারি নিয়ম মেনে শুক্রবার আলজিরিয়ায় পা রাখল সি-১৩০ বিমান। আর তার মধ্যে কফিনবন্দি শহীদদের দেহাংশ।

শুক্রবার তাই আলজিরিয়ায় কোনো কোলাহল শোনা যায়নি। চারিদিকে শুধু ছেয়ে গিয়েছিল এক শোকবিহ্বল পরিবেশ। শুধু রাস্তার উপরে সাইরেন বাজিয়ে বাজিয়ে এগিয়ে চলেছিল সামরিক বাহিনীর কনভয়, আর তার সামনে আলজিরিয়ার পতাকায় ঢাকা শহীদদের দেহাংশ। শনিবার দেশের সমস্ত নাগরিক বীর শহীদদের করোটির সামনে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেন। আর রবিবার তাঁদের জাতীয় শহীদ সমাধি অঞ্চলে সমাধিস্থ করা হবে।

আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের হত্যা পরবর্তী আন্দোলনের সূত্রে বারবার উঠে এসেছে ঔপনিবেশিকতা, বর্ণবিদ্বেষ এবং দাসপ্রথার কথা। আর সেই প্রতিবাদের শরিক হয়ে জাতিপুঞ্জের মুখ্য মানবাধিকার আধিকারিক মিশেল ব্যাকেলেট সমস্ত শক্তিশালী দেশকেই তার ঔপনিবেশিক ইতিহাসের জন্য ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই অনুরোধে সারা দিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স। সেইসঙ্গে শেষ হল সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসের এক নৃশংস অধ্যায়ের। শেখ বাউজিয়ান এবং তাঁর সহকারীরা আর ফ্রান্সের সামরিক দক্ষতার স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে নয়, বরং পরিচিত হবেন উত্তর আফ্রিকার কালো মানুষদের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবেই।

Powered by Froala Editor

Latest News See More