অনেকেই তাঁকে চেনেন, বিখ্যাত অনুবাদক এবং লেখক লোকনাথ ভট্টাচার্যের ফরাসি সহধর্মিণী হিসেবে। কিন্তু নব্বই ছুঁইছুঁই ফ্রাঁস ভট্টাচার্য নিজেও বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ সাধিকা। নিরলস সাহিত্যচর্চার জন্যই গতকাল রবীন্দ্র পুরস্কার উঠল তাঁর হাতে।
৫০-এর দশকে লোকনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিবাহ হয় ফ্রাঁসের। মূল ফরাসি থেকে র্যাঁবো, দেকার্তের রচনা বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন লোকনাথ। আর ফ্রাঁস নিজেকে ডুবিয়ে রাখলেন বাংলা সাহিত্যে। ফরাসি ভাষায় একের পর এক অনুবাদ করে চলেছেন ভাষার শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলি। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালি, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ ও কপালকুণ্ডলা, রবীন্দ্রনাথের ‘যোগাযোগ’, ‘নষ্টনীড়’ থেকে তিনি পৌঁছেছেন মঙ্গলকাব্যে। অনুবাদক শেলডন পোলোকের অনুরোধে ফ্রাঁস তর্জমা করেন ‘অন্নদামঙ্গল’। বর্তমানে চণ্ডীমঙ্গলে ঝুঁকেছেন তিনি। এছাড়া স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ের অনুরোধে তাঁর বেশ কিছু ছবির ফ্রেঞ্চ সাবটাইটেলও লিখেছেন ফ্রাঁস। ফরাসিতে অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও তারাশঙ্করের ছোটগল্প, জীবনানন্দের কবিতা। তাঁর করা দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার মহাশয়ের অমর সৃষ্টি ‘ঠাকুমার ঝুলি’র স্ট্রাকচারাল অ্যানালিসিস পাঠকমহলে আজও সুসমাদৃত।
২২ বছর এদেশে কাটিয়েছেন ফ্রাঁস। বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁর আত্মার সম্পর্ক। বর্তমানে তিনি পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর। তবে তাঁর কাজের ব্যাপ্তির নিরিখে স্বীকৃতি জুটেছে সামান্যই। ‘আরণ্যক’ অনুবাদের জন্য ফ্রাঁস পেয়েছেন তাঁর নিজের দেশের সর্বোচ্চ সম্মান। ২০১২ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি-লিট উপাধি দিয়েছে। জীবনসায়াহ্নে এই রবীন্দ্র পুরস্কার তাঁর মুকুটে নতুন পালক জুড়ল, তা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor