অনেক সময় সার্জারি করতে গিয়ে দেহের মধ্যেই রয়ে গেছে সূচ। কিংবা অপেরশন করে চিকিৎসকদের রোগী পাকস্থলি থেকে বার করতে দেখা গেছে ধাতব বস্তু। কিন্তু মাথায় যদি দীর্ঘদিন আটকে থাকে কোনো ধারালো অস্ত্র? কী হতে পারে তার পরিণতি? চিনের শ্যানডং প্রদেশের এক হাসপাতাল এমনই বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে, এক ব্যক্তির মাথা থেকে বার করে আনলেন জং ধরা ইঞ্চি চারেকের একটি ছুরি। তবে অবিশ্বাস্য ব্যাপার, ছুরিটি গেঁথে ছিল ২৬ বছর!
৭৬ বছর বয়সি, ডোরিজি নামের ওই ব্যক্তি পেশায় কৃষক। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। আক্রমণকারীরা মাথায় নৃশংসভাবে গিঁথে দিয়েছিল ছুরিটি। পরে ডোরিজি সুস্থ হয়ে উঠলেও, মাথার ভিতরেই থেকে যায় সেই ছুরি। সেটিকে বার করা সম্ভব হয়নি তখন।
২০১২ নাগাদ ওই ব্যক্তির কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। প্রচণ্ড মাথার যন্ত্রণার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তির সমস্যা চিন্তায় ফেলে তাঁকে। চিকিৎসকের কাছে দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৎক্ষণাৎ। কিন্তু ডাক্তাররা মনে করেছিলেন, ছুরিটি বার করলে তৈরি হতে পারে প্রাণনাশের আশঙ্কা। অবশেষে আশার আলো দেখাল শ্যানডং প্রদেশের জিনান অঞ্চলের কোয়ানফোসান হাসপাতাল।
২ থেকে ৮ এপ্রিল। ডাক্তারদের এই এক সপ্তাহের অক্লান্ত চেষ্টার পরে সফল হল দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকরা অনেকেই বলছেন, এই অস্ত্রপ্রচার এবং ডোরিজির লড়াই ‘মিরাকল’। প্রধান নিউরো সার্জেন, ডঃ লিউ গুয়ানচুং জানান, ডোরিজির কাছে অস্ত্রোপচারই একমাত্র উপায় ছিল এই যন্ত্রণা থেকে স্থায়ী মুক্তির।
এখন শারীরিকভাবে যথেষ্ট সুস্থ ওই ব্যক্তি। হাঁটাচলার পাশাপাশি কথা বলতেই অসুবিধা হচ্ছে না তাঁর। অবসান হয়েছে দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার। ফিরে পেয়েছেন দৃষ্টিশক্তিও। তবে এখনো হাসপাতালের পর্যবেক্ষণেই রয়েছেন ডোরিজি।
ডোরিজির করোটির এক্স-রে রিপোর্ট সামনে এসেছিল সম্প্রতি। ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে সেই এক্স-রে স্ক্যানের ছবি। চিকিৎসকদের এই সাহসী অপরেশনের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সকলেই। এভাবে নতুন করে দ্বিতীয়বার সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেওয়া কি মুখের কথা?