হাতে আর মাত্র এক সপ্তাহ। আগামী ৭ মার্চ বার্সেলোনার ক্লাব সভাপতি নির্বাচন। তার আগেই এই খবরে চমকে গেল গোটা বিশ্ব। গ্রেপ্তার হলেন বার্সার সাবেক প্রেসিডেন্ট মারিয়া জোসেফ বার্তমেউ। এককথায় এই ঘটনা ফুটবলের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বার্তমেউ ছাড়াও বোর্ডের আইনি সদস্য গোমেজ পোন্তি এবং ব্যবস্থাপক অস্কার গাউ-সহ গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও সাত কর্মকর্তা।
গত বছর থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছিল ন্যু ক্যাম্পের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি। সংবাদমাধ্যম জুড়ে বা বার উঠে আসছিল ‘বার্সাগেট’ তদন্তের কথা। সেই তদন্তের সূত্রেই গ্রেপ্তার হলেন বার্তমেউ। আরও একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। মেসির সঙ্গে ক্রমেই তিক্ততা বাড়তে বাড়তে সাপে-নেউলে হয়ে উঠেছিল বার্তমেউ-এর সম্পর্ক। সেইসঙ্গে আগাম নির্বাচনের প্রার্থী লাপোর্তার সঙ্গে মেসি ও পিকের সুসম্পর্ক যেন বাড়তি গাত্রদাহের কারণ হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে।
মেসি-সহ ক্লাবের একাধিক তারকার সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছিল যে। বারবার উঠে আসে ক্লাব ছাড়ার প্রসঙ্গ। সেইসময় ক্লাবের অনুরাগীদেরও কটাক্ষের মুখে পড়তে হয় বার্সেলোনার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে। বিষয়টিকে নিষ্ক্রিয় করতে এবং নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে পিআর এজেন্সি ‘আই ৩’-র সঙ্গে প্রায় পৌনে ২ লাখ পাউন্ডের চুক্তি করেন বার্তমেউ। কিন্তু কী কাজ ছিল এই সামাজিক মাধ্যম ব্যবস্থাপক সংস্থার?
বার্তমেউ-এর সমালোচনা করা বার্সা তারকাদের নামে জাল আইডি থেকেই কুৎসা ও অপপ্রচার রটাত ‘আই ৩’। শুধু মেসি, পিকে কিংবা সুয়ারেজরাই নয়, সেই তালিকা থেকে বাদ ছিল না জাভি, ইনিয়েস্তারাও। এমনকি বিভিন্ন কমেন্টে অশালীন কথাও লেখা হয়েছিল লিও মেসি-র স্ত্রী আন্তোনেলার সম্পর্কে।
আরও পড়ুন
ঠিক যেন জানলা থেকে ঝরে পড়ছে বইয়ের স্তূপ, বার্সেলোনার রাস্তায় আশ্চর্য স্থাপত্য
গত বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লাবের আট সদস্য এই গোপন চুক্তির কথা সামনে আনেন। মামলা গড়ায় পুলিশের খাতায়। স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যমজুড়ে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল ক্যাতালনের শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবটির আভ্যন্তরীণ বিবাদ। মার্চ মাস থেকেই তদন্ত শুরু করে স্পেনের পুলিশ। বিভিন্ন নথি এবং ক্লাবের ব্যাঙ্ক ট্রানজাকশন খতিয়ে দেখা হয়। জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার বার্সার দফতরেও হানা দিয়েছিল তদন্তকারী অফিসাররা। জেরা করা হয়েছিল বার্তমেউকে।
কিন্তু এতকিছুর পরেও নিজেকে কলঙ্কমুক্ত করতে দৃঢ় ছিলেন বার্তমেউ। পদত্যাগ তো দূরের কথা, অভিযোগ এনেছিলেন তাঁকে ফাঁসানোর চক্রান্ত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ভোটের তোড়জোড় শুরু হলে গত ২৭ অক্টোবর সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান বার্তমেউ। তবে ‘সিংহাসন’ থেকে সরে গিয়েও শেষ অবধি বাঁচলেন না তিনি। সমস্ত প্রমাণ মেলার পরই আজ তাঁকে আটক করল পুলিশি।
আরও পড়ুন
বার্সেলোনার সঙ্গে সম্পর্কে ইতি, এবার কি অ্যাথলেটিকোর পথে সুয়ারেজ?
তবে শুধু বার্সাগেটই নয়। বার্সেলোনার আর্থিক তহবিল তছরুপেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর ওপরে। এমনকি দেউলিয়া হতে বসেছে স্প্যানিশ জায়েন্ট। গত জানুয়ারিতেই ক্লাবের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বেতন ছাঁটা হবে সকল খেলোয়াড়দেরই। ছাড় পাবেন না লিও মেসি, গ্রিজম্যানের মতো প্রথম সারির তারকারাও। এক্ষেত্রে বার্তমেউয়ের সাফাই করোনার কারণে ক্লাবের আয় অনেকটা কমে যাওয়ায় এই আর্থিক টানাপোড়েন। যদিও হিসাব বলছে ২০১৯-২০ মরশুমেই ক্লাবের দেনার পরিমাণ ছিল ১২০ কোটি ইউরো। স্প্যানিশ রেডিয়োর সূত্রে খবর, বার্তমেউ-এর অধীনস্থ শেষ কয়েকমাসে তা বেড়েছে আরও কয়েকশো কোটি।
তবে এখন সবথেকে বড়ো প্রশ্ন, সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তারের পরে ক্লাবের হাল সত্যিই কি ফিরবে? সে উত্তর এখনও অজানা। অন্যদিকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি বার্তমেউ…
আরও পড়ুন
রাতারাতি বদলে গেল বার্সেলোনার কোচ, দায়িত্ব নিলেন ‘পয়মন্ত’ রোনাল্ড কোয়েম্যান
Powered by Froala Editor