আঘাত আর প্রতিবন্ধকতা তাঁর কেরিয়ারের সঙ্গী। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হাঁটুর ইনজুরি দিয়ে শুরু, এরপর বাইশ গজের মধ্যে ১১বার আঘাত পেয়েছেন মাশরাফি। বাঁ হাঁটুতে চারবার এবং ডান হাঁটুতে তিনবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। আর এসবের জন্যই পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘ইনজুরি মাশরাফি’ নামে। কিন্তু প্রতিবার ক্রিকেট দর্শকরা জানতেন, আবার নিশ্চই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন মাশরাফি। এবার অবশ্য সত্যিই চিন্তিত তাঁর ভক্তরা। কারণ বাংলাদেশের এই পেস বোলারের শরীরেও থাবা বসিয়েছে করোনা ভাইরাস।
শনিবার দুপুরে সংবাদ সংস্থা বিবিসিকে মাশরাফির আত্মীয়রা জানিয়েছেন, টেস্ট রিপোর্টে তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের হদিশ মিলেছে। শুক্রবার থেকেই জ্বর ছিল মাশরাফির। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি বলেই জানিয়েছেন আত্মীয়রা। এর আগেই মাশরাফির শ্বাশুড়ি এবং শালীর শরীরেও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সংক্রমণের বিষয়ে জানার পরেও মাশরাফি ঢাকায় নিজের বাসভবনে আইসোলেশনের মধ্যে আছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে ইতিপূর্বে তিনি দুবার নড়াইলে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে ঘুরে এসেছেন।
বাংলাদেশকে ক্রিকেট দুনিয়ার সামনে সফলতার সঙ্গে দাঁড় করানোর কৃতিত্ব যে কয়েকজন মানুষের উপর দেওয়া যায়, মাশরাফি বিন মর্তুজা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ৯০এর দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য হিসাবে খেলতেন মাশরাফি। তখনই নজর কাড়েন দলের কোচ তথ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের। তাঁর অনুরোধেই জাতীয় দলে অভিষেক। এবং ৮ নভেম্বর ২০০১, বৃষ্টির জন্য জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ অমীমাংসিত থেকে গেলেও, চারটি উইকেট নিয়ে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন নবাগত মাশরাফি।
এরপর দুই দশক ধরে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে তাঁর কেরিয়ার। এতদিন অভাব আর দারিদ্র্যের সঙ্গে এগিয়েছে যে লড়াই, সেটাই এবার খুঁজে নিল অন্য প্রতিপক্ষ। আর সেইসঙ্গে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় দলকে বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করার জেদ চেপে বসলো মাশরাফির ঘাড়ে। আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের দিকে তাকিয়ে দেখলে বোঝা যায়, মাশরাফিরা কতদূর সফল। কিন্তু লড়াই তো এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। বাইশ গজে অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেও হাতছাড়া হয়েছে বিশ্বকাপ। সেই প্রস্তুতিও চলছিল ভিতরে ভিতরে। কিন্তু হঠাৎ তাঁর অসুস্থতার খবরে সব স্বপ্নই যেন অন্ধকার হয়ে এলো। তবে এই বাধা টপকে আবার বাইশ গজে ফিরবেন মাশরাফি, এমনটাই আশা রাখেন তাঁর ভক্তরা।
Powered by Froala Editor