ক্ষমাতেই সমাধান, বিশ্বাস এই উপজাতির

খোলা মাঠে জড়ো হয়েছেন গোটা গ্রামের বাসিন্দারা। গোল হয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শ-তিনেক মানুষ। আর এই জটলার মাঝে নতমুখে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি। হ্যাঁ, তিনি অপরাধী। এবার তাঁর শাস্তি ঘোষণা করবেন গ্রামবাসীরা? নাকি নিজের হাতে তুলে নেবেন আইন? তবে কি শুরু হবে নৃশংসতার পালা? পাল্টা প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠবেন সকলে? 

না, কোনোটাই নয়। মব-লিঞ্চিং তো দূরের কথা, এরপর যা ঘটল তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই। একে একে এগিয়ে এলেন গ্রামের প্রতিটি পুরুষ, মহিলা এবং শিশু। স্মৃতিচারণায় তুলে আনলেন দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিটির নানান ইতিবাচক দিক। তাঁর করা ভালো কাজ, চারিত্রিক গুণাবলি। আর সব শেষে তাঁদের মুখে উচ্চারিত হল ‘ক্ষমা’ (Forgiveness)। 

না, কোনো চলচ্চিত্র কিংবা উপন্যাসের পাতা থেকে এই দৃশ্য তুলে আনা হয়নি। এই ছবি বাস্তবের। অপরাধীদের এভাবেই ‘শাস্তি’ দেয় বাবেম্বা (Babemba Tribe) উপজাতির মানুষরা। বাবেম্বারা মূলত বান্টু জনগোষ্ঠীর উপজাতি। জাম্বিয়ার সেন্ট্রাল প্রোভিন্স এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস তাঁদের। সভ্য সমাজের সঙ্গে তাঁদের যোগ নেই বলেই চলে। অনেকটা মাসাইদের মতোই শিকার ও পশুপালন করেই দিন কাটায় বাবেম্বারা। তবে তাঁদের সমাজের এই রীতির কাজে হার মানতে বাধ্য উন্নত থেকে উন্নততর সভ্যতাও। 

যুদ্ধ, চোখের বদলে চোখ— এসব শব্দ বাবেম্বাদের শব্দভাণ্ডারে নেই। বরং, প্রাচীনকাল থেকেই ক্ষমায় বিশ্বাস করে আসছে বাবেম্বারা। পৃথিবীর যে-কোনো ধর্মেই লেখা রয়েছে শান্তির কথা। কিন্তু সভ্য সমাজে চরম ধর্মভীরুরাও কি মান্যতা দেয় সেই উপদেশকে? আদৌ কি নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে শান্তির পথে হাঁটেন তাঁরা? না, সেখানে আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই অরণ্যবাসী জনজাতির সংস্কৃতি মুগ্ধ করার মতোই।

শুধু ক্ষমাই নয়। অপরাধীদের সমাজে সমান জায়গা করে দিতেও বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করে বাবেম্বারা। ক্ষমা-পর্বের পর আয়োজিত হয় বিশেষ পরব। অপরাধীরাও যাতে মাথা তুলে বাঁচতে পারার সমস্ত রসদ পান, সেদিকটাও নজর রাখেন গ্রামবাসীরা। সেই কারণেই বোধ হয়, কোনো পুলিশের দরকার পড়ে না এই প্রান্তিক সমাজে। দরকার পড়ে না আইনবিধিরও। অপরাধের মাত্রাও তাই সেখানে ন্যূনতম। 

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতসম্পন্ন বৌদ্ধ শিক্ষক জ্যাক কর্নফিল্ডের বই ‘দ্য আর্ট ফর ফরগিভনেস লাভিং কাইন্ডনেস অ্যান্ড পিস’-এর হাত ধরেই ফের একবার ইন্টারনেটে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বাবেম্বাদের এই গল্প। তবে তাঁদের সমাজ তো আজকের নয়। বহু যুগ ধরেই এই আচারের অভ্যাস করে আসছেন তাঁরা। প্রশ্ন থাকে, আমরা কি একটুও ক্ষমাধর্ম শিখতে পারি না তাঁদের থেকে?

Powered by Froala Editor

More From Author See More