দৈনিক ৩১৫ টাকা মজুরির কাজ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জঙ্গলে জঙ্গলে টহল দিতে বেড়াতে হয় তাঁকে। সারাদিন এই ক্লান্তির পর দু’দণ্ড বিশ্রামের কথাই মাথায় আসবে যে-কোনো মানুষের। তবে আনুষ্ঠানিক কাজ থেকে ছুটি পেলেই, অন্য এক যুদ্ধক্ষেত্রে নামেন তিনি। বৃক্ষরোপণ এবং নিজের বসানো গাছেদের চর্চা। বিগত দু’বছর ধরেই এই কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন ওড়িশার বনাই অঞ্চলের ৪২ বছর বয়সি বাসিন্দা সরোজিনী মোহন্ত (Sarojini Mohanta)। তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটি অরণ্য। এবার এই মহীয়সীকেই বিশেষ সম্মান প্রদান করল ওড়িশার বন দপ্তর।
‘সরোজিনী বন’ (Sarojini Van)। হ্যাঁ, তাঁর হাতে নির্মিত বনাই-এর অরণ্য এবার থেকে পরিচিত হবে তাঁর নামেই। এমন দ্বিতীয় উদাহরণ গোটা ভারতে নেই বললেই চলে।
ওড়িশার বনাই অঞ্চলটি মূলত খনিপ্রধান অঞ্চল। কুদেরমুখ বা ময়ূরভঞ্জের মতো বনাইগড় বা সংক্ষেপে বনাই থেকেও উত্তোলিত হয় লৌহ আকরিক। তা অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও, বিপর্যস্ত সেখানকার বাস্তুতন্ত্র। ক্রমাগত খননের ফলে ধ্বংস হতে বসেছে অরণ্য। তবে যেটুকু অরণ্য বন দপ্তরের আওতায় আছে, সেটুকুর অস্তিত্ব নিশ্চিত করতেই বেশ কিছু অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেছিল বন দপ্তর। সেই তালিকাতেই ছিল সরোজিনীর নাম।
কাজে যোগদান দেওয়ার পর শুধু অরণ্যের সুরক্ষাই নয়, প্রায় ৩ একর অনুর্বর জমিকেও অরণ্যে রূপান্তরিত করে ফেলেন তিনি। সারাদিনের টহলদারি শেষ করে বিকেল হলে গাছের চারা ও কলম তৈরিতে মন দেন সরোজিনী। নিজে হাতেই তৈরি করেন ভার্মি-কম্পোস্ট। আর তাঁর এই একান্ত পরিচর্যারই ফলাফল বনাই-এর জঙ্গলের মাঝে ৩ একরের এই ছোট্ট বন। সরোজিনীর এই কাজে রীতিমতো বিস্মিত বনকর্মীরাও। ল্যাটারাইট মৃত্তিকার ওপরেও যে ফলের গাছ জন্মাতে পারে, তা কোনোদিনও ভাবতেই পারেননি তাঁরা।
আরও পড়ুন
আসামের এই অরণ্যের রক্ষাকর্তা প্রাক্তন চোরাশিকারীরাই
তাঁর এই একাগ্রতা, পরিশ্রম এবং অবদানকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেই, সম্প্রতি তাঁর নামে নামকরণ করা হয় এই ছোট্ট অরণ্যটির। বনাই-এর ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট বলছে, সরোজিনীর রোপণ করা চারাগুলির ৯৫ শতাংশই বেঁচে রয়েছে। এমনকি পরিণতও হয়েছে সেগুলি। সঙ্গে আরও চার একর জমির ওপরে বনায়নের কাজ শুরু করেছেন ৪২ বছর বয়সি মহিলা।
আরও পড়ুন
মৃত্যু পরোয়ানা উপেক্ষা করে অরণ্যের রক্ষাকর্তা ঝাড়খণ্ডের ‘লেডি টারজান’
ওড়িশার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত এক দশকে সে-রাজ্যে ছাঁটা হয়েছে ৫৭৪১০ হেক্টর অরণ্য। যারমধ্যে শুধু খননকার্যের জন্যই বিপর্যস্ত হয়েছে ২৮ হাজার হেক্টর জমি। এমন বিপর্যয়ের দিনে, সরোজিনীই যেন আশার আলো দেখাচ্ছেন ওড়িশার বনকর্মীদের…
আরও পড়ুন
পৈতৃক ৭০ একর জমিতে ঘন অরণ্য, পরিবেশ রক্ষায় অটল তেলেঙ্গানার প্রৌঢ়
Powered by Froala Editor