৯ বার ‘মৃত্যু’র পরেও জীবিত নাইজেরিয়ার সন্ত্রাসবাদী?

শিকাও মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাক্যটিকে এভাবে একটু বদলে নিলে হয়তো খুব একটা ভুল হবে না। অবশ্য যদি এবার সত্যিই মৃত্যু হয়ে থাকে নাইজেরিয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী আবুবকর শিকাও-এর। এই নিয়ে ৯ বার তাঁর মৃত্যুর খবর শোনা গেল। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘বোকো হারাম’-এর নেতা শিকাও সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন, এমন কথা প্রচার করে বারবার হাস্যস্পদ হয়েছে সেদেশের সেনাবাহিনী। তাই এবার তারা সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। তবে ‘বোকো হারাম’-এর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে পাওয়া খবরের উপরে অনুমান করেই বলা যায়, শিকাও এবার নিতান্তই মরেছেন।

একদিকে ‘বোকো হারাম’ আর অন্যদিকে ‘ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্সেস’ বা আইস্যাপ; জুজুধান দুই সন্ত্রাসবাদী সংঘঠনের অত্যাচারে রীতিমতো নাভিঃশ্বাস উঠেছিল নাইজেরিয়ার মানুষের। বিগত দুই দশক ধরে একের পর এক অভিযান চালিয়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল এই দুই সংগঠন। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ত্রাস ছিলেন অবশ্যই আবুবকর শিকাও। ২০১৪ সালে ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীকে রাতারাতি অপহরণ করে রীতিমতো অবাক করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১০০ জনকে পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকিদের কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি। শোনা যায়, সুইসাইডাল বোম্বিং শিকাওয়ের অত্যন্ত পছন্দের রণকৌশল। অপহৃত ছাত্রীদেরও সেই কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনুমান অনেকের।

শিকাওকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় গ্রেপ্তার করতে একের পর এক অভিযান চালিয়েছে নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী। বহু অভিযানের শেষে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁরা জানিয়েছেন, শিকাও সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবারও সামাজিক মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বের কথা জানিয়ে দিয়েছেন শিকাও। ২০১৮ সালে এমনই এক ট্যুইটবার্তায় তিনি লিখেছিলেন, শিকাও যদি মারা গিয়ে থাকে তবে আমি কে? ফলে এবার আর ঝুঁকি নিতে চায়নি সেনাবাহিনী। তাছাড়া এবার শিকাওকে ধরতে সেনাবাহিনী কোনো অভিযান চালায়নি।

তবে ‘বোকো হারাম’-এর ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে শিকাও দেখলেন তাঁর বাসস্থান ঘিরে ফেলেছে প্রতিপক্ষ সংঘঠন আইস্যাপ। পালটা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না বোকো হারাম। আর আইস্যাপের সৈন্যসংখ্যাও অনেক বেশি। এই অবস্থায় নিজের প্রিয় রণকৌশল সুইসাইডাল বোম্বিং-কেই বেছে নিলেন তিনি। গায়ে বোম্বিং জ্যাকেট চাপিয়ে সোজা পৌঁছে গেলেন শত্রুপক্ষের শিবিরেই। বিষ্ফোরণে তাঁর মৃত্যু তো হলই, সেইসঙ্গে আইস্যাপেরও অন্তত ৪০ জন সেনা মারা গিয়েছে।

আরও পড়ুন
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই মৌলবাদী আক্রমণ? আশঙ্কায় আফগান মহিলারা

আবুবকর শিকাওয়ের মৃত্যু নিয়ে কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশিত না হলেও ইতিমধ্যে নাইজেরিয়ার মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে সেই খবর। তবে এখনও সন্দেহ ঝেড়ে ফেলতে পারেননি সকলে। আর নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর মতে, শিকাওয়ের মৃত্যু খানিকটা স্বস্তির সংবাদ হলেও একেবারে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং আইস্যাপের সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁর মৃত্যু হলে মেনে নিতে হবে ইতিমধ্যে আইস্যাপের শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বোকো হারামো তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। সংগঠনের ভিতর থেকেই হয়তো তৈরি হবে নতুন কোনো নেতা।

আরও পড়ুন
আফগানিস্তানে দু-দশকব্যাপী মার্কিন সেনা আধিপত্যের ইতি?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সন্ত্রাসবাদের প্রকোপ চলবে আরও ২০ বছর, সতর্ক করলেন নাইজেরিয়ার সেনাপ্রধান