২০০ বছরের পুরনো বাসস্থান ছেড়ে শহরের বহুতল হাউজিং কমপ্লেক্সে আশ্রয় নিচ্ছেন অ্যাডো'লির গ্রামের মানুষ। সেই ফসলের ক্ষেত, সবজির বাগান আর ২৬০০ ফুটের খাড়াই সিঁড়ি, সবকিছু পিছনে ফেলে শুরু করতে চলেছেন এক নতুন জীবন। কিন্তু সেই দারিদ্র্য আর দুঃখের স্মৃতির মধ্যেও কি কোথাও এমন কিছু নেই, যা তাঁদের হাতছানি দিয়ে ডাকে! ২০০ বছরের ইতিহাসে এই হতাশা-জর্জরিত গ্রামের সঙ্গেই যে ছিল তাঁদের নাড়ির টান। আর তাই ৮৪টি পরিবার সেই গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিলেও, ৩০টি পরিবার সেখানেই থেকে গিয়েছেন। সেই দুর্গম পাহাড়ি ঢালেই জীবন কাটাতে ইচ্ছুক তাঁরা।
চিনের অ্যাডো'লির গ্রাম এখন পৃথিবীর কাছে একেবারেই অপরিচিত নয়। ২০১৬ সালে এক স্কুল পড়ুয়ার ছবির সঙ্গে সঙ্গেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই গ্রামের কথা। তখনই সবাই ফিরে তাকাতে শুরু করেন সেখানকার ২০০ বছরের ইতিহাসের দিকে। মানুষের কঠিন জীবন-সংগ্রামের দিকে। আর দেখতে দেখতে বহু পর্যটক ভিড় জমান এই গ্রামে। আকর্ষণ বলতে, ২৬০০ ফুটের বেশি উঁচু খাড়াই পাহাড়ি খাত। এই খাতের দেয়াল বেয়েই ওঠানামা করেন সেখানকার মানুষ। বাঁশের তৈরি দুর্বল সিঁড়ি বেয়ে যাতায়াত করেন মানুষ। ফসল ওঠার পর সেগুলো মাথায় চাপিয়ে নেমে আসেন সেই সিঁড়ি বেয়ে। তারপর কাছাকাছি জনপদে গিয়ে সেসব বিক্রি করে নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আবার উঠে যান সেই সিঁড়ি দিয়েই। এর মধ্যে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু চিরাচরিত বাসস্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবেননি তাঁরা।
২০১৬ সালে এই গ্রামের কথা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়তেই চিনের সরকারের দৃষ্টি পড়ে সেদিকে। তারপর কয়েক মাসের মধ্যেই বাঁশের সিঁড়ির পরিবর্তে বসানো হয় ইস্পাতের তৈরি হ্যান্ড-রেইল দেওয়া সিঁড়ি। এর ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও যেমন কমে, তেমনই গ্রামবাসীদের যাতায়াতের গতিও বৃদ্ধি পায়। আর এর মধ্যেই গতবছর চিন সরকার গ্রহণ করে আরেকটি প্রকল্প। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যেই দেশের দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর করার কথা জানানো হয়েছিল। যদিও মহামারীর প্রকোপ সেই প্রকল্প খানিকটা শ্লথ হয়েছে। তবে এই প্রকল্পের অংশ হিসাবেই অ্যাডো'লির গ্রামের অধিবাসীদের পুনর্বাসন দেওয়া হয় জাওজু সদর শহরে। প্রতিটি পরিবারের জন্য সরকার থেকে ২৫০ থেকে ১০০০ বর্গফুটের একেকটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে পরিবারপিছু একজনকে কাজ দেওয়া হয়েছে শহরেই। এর ফলে পুনর্বাসিত ৮৪টি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে।
তবে এখনও অ্যাডো'লির গ্রামে স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে আছে ৩০টি পরিবার। অবশ্য ২০১৬ সাল থেকে ক্রমশ পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকায় সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থাও বেশ উন্নত হয়েছে। পর্যটন শিল্প থেকেই গতবছর গ্রামের মোট আয় ছিল ১০ লক্ষ ইয়ান। সেইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এতদিন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করার পর এবার কি তবে খানিকটা স্বাচ্ছল্যের মুখ দেখবেন অ্যাডো'লির গ্রামের মানুষ?
Powered by Froala Editor