রবি-সন্ধ্যায় ‘নাটকীয়’ ফুটবল ফাইনাল, বাজিমাত করল কারা?

‘একবছর ধরে প্র্যাকটিস করিয়ে দল এনেছে। হবে না?’
‘ইউনাইটেডকে হারানো কিন্তু কঠিন।’
একটা টানটান ফাইনাল ম্যাচ। সাইডলাইনের ধার থেকে উড়ে আসা কথাবার্তা, টিপ্পনি। মনে হচ্ছিল, এটা যেন বা আই লিগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ চলছে। কিন্তু এই খেলোয়াড়দের একটা অন্য পরিচয়ও আছে। এঁরা প্রত্যেকেই নাট্যকর্মী (Theatre Artists)। টুর্নামেন্টটিও ফাইভ এ সাইড। সাকুল্যে বারো-পনেরো মিনিটের একেকটি অর্ধ। কিন্তু উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি কারো। শীতের আমেজ মেখে ফুটবলে (Football) মজেছেন ১৬টি নাট্যদলের কুশীলবরা। মিন্টোপার্কের কাছেই ভিএস স্পোর্টস অ্যারেনাতে হয়ে গেল ‘সহজ কমিউনিটি কাপ’। লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল থিয়েটার হল। তখনই হঠাৎ করে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘সহজ’ নাট্যদলের পরিচালক অনুভব দাশগুপ্ত। সংক্রমণ কমার পর ধীরে ধীরে সরেছে মঞ্চের পর্দা। নাট্যকর্মীদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। তার মাঝে একটুকরো অবসর এই টুর্নামেন্ট।

খেলা জমে উঠল সেমিফাইনাল থেকে। জয়রাজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ‘তিতুমীর’ নাটকের দল বনাম হলুদ জার্সি গায়ে ‘আর্টিস্টস ইউনাইটেড'। কোয়ার্টার ফাইনালে তিতুমীর ভালো খেললেও, হলুদ ঝড়ে যেন উড়ে গেল তারা। গত টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ইউনাইটেড পনেরো মিনিট বিধ্বংসী ফুটবল খেলল। পরের ম্যাচে ‘দৃশ্যায়ন’ নাট্যদলের মুখোমুখি হল ‘বেহালা কাক্ষিক’ থিয়েটার গ্ৰুপ। কাক্ষিক বছরখানেক ধরে এই টুর্নামেন্টকে পাখির চোখ রেখে প্রস্তুতি নিয়েছে। তারই ছাপ পড়ছে খেলায়। তাদের সমর্থকদের চিৎকারে কান পাতা দায়। সেই গর্জন খেলোয়াড়দের বুকে যেন আগুন ধরাল। এবং...

সেমিফাইনালের পরে একটা দুর্ধষ ফাইনাল ম্যাচ। ইউনাইটেড বনাম কাক্ষিক। প্রায় সমানে সমানে খেলা চলছে। ইউনাইটেডে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু কাক্ষিক যে প্রত্যেকটা ম্যাচেই বাঘের মতো খেলেছে। কাজেই মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচে যেন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেলতে নেমেছে। ইউনাইটেডের সম্মিলিত আক্রমণের সামনে যেন দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে কাক্ষিকের গোলকিপার অমিত। একের পর এক লং বল, দুর্ধর্ষ থ্রু বাড়িয়েও পেনাল্টি বক্সের কাছে ইউনাইটেড হার মানল, দুর্ভেদ্য ডিফেনের কাছে। খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। কিন্তু সেখানেও স্কোরলাইন এক। শেষে সাডেন ডেথ। সেখানেই কাক্ষিক টপকে গেল ইউনাইটেডকে। বছরখানেকের প্র্যাকটিস বিফলে যায়নি। সমর্থকদের উল্লাসের পাশাপাশি গতবছরের চ্যাম্পিয়ন ইউনাইটেডকে গার্ড অফ অনার দিল কাক্ষিক। সকলেই জড়িয়ে ধরছিল সবাইকেই। মাঠের বাইরে উধাও সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ‘আমরা একটাই কমিউনিটি। থিয়েটার কমিউনিটি।’ বিজয়ী-বিজিতদের সমবেত উল্লাস অনুভবের কথাটিকেই যেন সত্যি বলে প্রমাণ করে...

Powered by Froala Editor