করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে পৃথিবীজুড়ে চলছে লকডাউন। আর এর ফলেই ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছে পরিবেশ। বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন রিপোর্টে এমনই আশার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের কয়েক হাজার বছরের কর্মকাণ্ডের কুপ্রভাব কি এত সহজেই অপসারিত হবে? না, তেমনটা মনে করলে একটু ভুল হবে। আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সেটাই দেখিয়ে দিল বোবোনাজা নদী। আমাজন উপত্যকার এই নদীটিকে ঘিরে অনেকগুলো আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। আর করোনা মহামারীর মধ্যেই সেই নদীতে দেখা দিল এক বিধ্বংসী বন্যা। এমন বিধ্বংসী বন্যা স্মরণাতীত কালে কেউ দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না এলাকার অধিবাসীরা।
আমাজন উপত্যকায় জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী। তেমনই একটি নদী বোবোনাজা প্রবাহিত হয়েছে ইকুয়েডরের মধ্যে দিয়ে। এই নদীর অববাহিকায় বাস করেন সারায়াকু, পাকায়াকু এবং টেরেসা মামা উপজাতির মানুষরা। ইতিমধ্যে এই তিন সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষ বাসস্থান হারিয়েছেন বন্যার কবলে। জলের নিচে চলে গিয়েছে এলাকার স্কুল, হাসপাতাল সমস্তকিছু। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। আর তার উপর আছে মহামারীর ভয়। করোনা ভাইরাস এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে সরকার বন্যা দুর্গতদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতেও ব্যর্থ। ফলে অদৃষ্টের উপরেই ভরসা রাখছেন আদিবাসীরা।
বোবোনাজা নদী বন্যার জন্য বিখ্যাত, একথা ঠিক। তবে মোটামুটি ২০ বছর অন্তর বন্যা দেখা দিত এই নদীতে। তবে ক্রমশ বন্যার ঘনঘটা বাড়ছে। বিগত এক দশকের মধ্যে ৫ বার বন্যা দেখা দিয়েছে এই নদীতে। আর প্রতিবার বন্যা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠেছে। আমাজন অববাহিকার নদীগুলির চরিত্রের এই পরিবর্তনের পিছনে জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই এই ঘটনা আবারও একবার দেখিয়ে দিল, বনভূমির উপর অত্যাচার চালিয়ে মানুষ নিজের বিপদ ডেকে এনেছে কীভাবে। কলকারখানা বন্ধ থাকায় পরিবেশ দূষণের উপর একটা সাময়িক ছেদ পড়েছে, একথা ঠিক। কিন্তু পরিবেশের যে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ঘটে গিয়েছে, তার সমাধান কোথায়?