নদী থেকে বর্জ্য প্লাস্টিক গিলে খাচ্ছে ড্রোন! নজির গড়ল ডাচ প্রযুক্তি

ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা জার্মানির মতো উন্নত দেশ— বর্তমান সময়ে সর্বত্রই পরিবেশবিদদের চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিক দূষণ। পুনর্ব্যবহারের মধ্যে দিয়েই এই সমস্যার সমাধান খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। তবে যে-সকল প্লাস্টিক বর্জ্য ইতিমধ্যেই মিশেছে সমুদ্র, নদী কিংবা হ্রদের জলে? হ্যাঁ, নিষ্কাশন প্রয়োজন সেগুলিরও। কিন্তু কীভাবে? 

সম্প্রতি, নদী ও অন্যান্য জলাভূমি থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের অভিনব পন্থার হদিশ দিল ডাচ সংস্থা ‘র‍্যান-মেরিন’। প্লাস্টিক নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করল বিশেষভাবে সক্ষম ভাসমান ড্রোন (Drone) ‘ওয়েস্ট শার্ক’। 

নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এই বিশেষ ড্রোনের মাহাত্ম্য। হ্যাঁ, হাঙ্গর কিংবা তিমির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করা হয়েছে এই ড্রোন। সাধারণত ছোটো মাছ শিকারের সময়, তিমি বা দৈত্যাকার হাঙ্গর গিলে ফেলে আস্ত মাছের ঝাঁক। তারপর মুখগহ্বরে শুধুমাত্র মাছগুলিকে পৃথক করে বার করে দেয় সামুদ্রিক জল। এই একই পদ্ধতিতে কাজ করে রটারডামে তৈরি হওয়া ৪ ফুট দীর্ঘ মেরিন ড্রোনটিও। 

ড্রোনটির মধ্যে রয়েছে মূলত দুটি কক্ষ। প্রথমটিতে অনেকটা তিমির মতোই জল-সমেত গিলে ফেলে প্লাস্টিক বর্জ্য। এই কক্ষে মূল বর্জ্যগুলির থেকে পৃথকীকরণ করা হয় ছোটো মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের। সেগুলিকে ফের ফিরিয়ে দেওয়া হয় প্রকৃতিতে। অন্যদিকে মূল প্লাস্টিক বর্জ্যগুলি সংরক্ষিত হয় দ্বিতীয় কক্ষে। এক একটি অভিযানে সবমিলিয়ে প্রায় ১৬০ লিটার প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্কাশন করতে পারে এই ড্রোন, এমনটাই জানাচ্ছে প্রস্তুতকারক সংস্থা। 

আশ্চর্যের বিষয় হল, এই যন্ত্র চালাতে প্রয়োজন পড়ে না কোনো জীবাশ্ম জ্বালানির। ফলে, স্বয়ংক্রিয় এই ড্রোনকে কার্বন-নিঃসরণ শূন্যই বলা চলে। এই ড্রোনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচও তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। পাশাপাশি পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে না এই যন্ত্র। ফলে, আগামীদিনে বিজ্ঞানীদের কাছে প্লাস্টিক অপসারণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে এই ড্রোন। তবে নদী, হ্রদ কিংবা পুকুরের মতো মিষ্টিজলের জলভূমি থেকে বর্জ্য পৃথকীকরণের জন্যই বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছে এই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি। সামুদ্রিক পরিবেশ অর্থাৎ লবণাক্ত জলেও এই যন্ত্রকে কর্মক্ষম করে তুলতে চলছে গবেষণা। আজ নয়তো কাল, সম্ভব হবে সেটাও...

Powered by Froala Editor