মেরু-পরিবর্তনের কারণেই বিলুপ্ত বহু প্রজাতি, জানাচ্ছে গবেষণা

পৃথিবীর উত্তর মেরু কোনদিকে? আর দক্ষিণ মেরুই বা কোথায়? এক বাক্যে সবাই উত্তর দেবেন, সাইবেরিয়া আর গ্রিনল্যান্ডের মাঝামাঝি উত্তরমেরু আর আন্টার্কটিকায় দক্ষিণ মেরু। কিন্তু দুই মেরুর এই অবস্থান একেবারেই স্থির নয়। বরং ধীরে ধীরে অবস্থান সরতে সরতে দুই মেরু একে অপরের জায়গাও নিয়ে নেয়। সম্প্রতি তেমনই এক প্রক্রিয়া চলছে। আর এর মধ্যেই বিজ্ঞানীরা দেখালেন, আজ থেকে ৪২ হাজার বছর আগে দুই মেরুর স্থান পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার ফলে কী ভীষণ দুর্যোগ নেমে এসেছিল পৃথিবীর বুকে। নানা বড়ো বড়ো গাছের মতোই সেই বিপর্যয়ে হারিয়ে গিয়েছে প্রাক-মানব প্রজাতি নিয়ানডারথাল।

ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথওয়েলসের গবেষক অধ্যাপক ক্রিস টার্নে জানিয়েছেন, আজ থেকে ৪০-৪২ হাজার বছর আগে একসঙ্গে একাধিক প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য ছিল। এই সময়েই যে পৃথিবীর পরিবেশে কোনো এক বিশেষ পরিবর্তন এসেছিল, তাতে সন্দেহ ছিল না। এবার সেই পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিল সাম্প্রতিক গবেষণা। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের গতিবিধি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, ওই সময়ে শেষবার দুই মেরু স্থান পরিবর্তন করেছিল। আর এই প্রক্রিয়া চলেছিল প্রায় ১ হাজার বছর ধরে।

পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র যে শুধুই অভিকর্ষ শক্তির উৎস, তাই নয়। এর পাশাপাশি ওজোন স্তরের গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে চৌম্বকক্ষেত্রের। পাশাপাশি নানা ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মিকে দূরে সরিয়ে রাখে এই চৌম্বকক্ষেত্রই। হঠাৎ সেই শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় নানা মহাজাগতিক রশ্মি সহজে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে চলে আসতে পেরেছে। এর মধ্যে অতিবেগুনি রশ্মি তো রয়েছেই। আর এইসমস্ত রশ্মির প্রভাবেই সেই সময়ের বিরাট বিরাট গাছ এবং প্রাক-মানব নিয়ানডারথাল হারিয়ে যায়। অবশ্য সব প্রজাতি যে হারিয়ে গিয়েছিল, এমনটা নয়। যে যে প্রজাতি টিকে গিয়েছিল, তাদের বেঁচে থাকার রহস্য ভেদ করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সেই গবেষণার সূত্র ধরেই হয়তো আগামী সঙ্কটের দিনে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে পাবে মানুষ।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রকাশ্য এল মানব ডিএনএ-র সর্বোচ্চ রেজোলিউশনের ছবি, প্রথমবার ভিডিও বানালেন গবেষকরা