প্রয়াত পাঁচবারের অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত সিনেমাটোগ্রাফার অ্যালান ডাভিউ

‘এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল’-এর সিনেমাটোগ্রাফার তিনি। অ্যালান ডাভিউ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন সম্প্রতি, ৭৭ বছর বয়সে। অ্যামেরিকান সোশাইটি অফ সিনেমাটোগ্রাফারের তরফে সম্প্রতি জানানো হয়েছে এই দুঃসংবাদ। গত ১৫ই এপ্রিল, বুধবার লস অ্যাঞ্জেলসে মারা যান তিনি।

বাগসী, এমপায়ার অফ দ্য সান, অ্যাভালন, দ্য কালার পারপল, ই.টি. দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল। তাঁর এই ৫টি কাজ মনোনয়নপত্র পেয়েছিল অস্কারের দরবারে। একাধিক কাজ করেছেন স্পিলবার্গের সঙ্গে। অ্যালানের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শোক প্রকাশ করেছেন স্পিলবার্গও। তিনি জানান, মানবিকতা কিংবা আন্তরিকতায় অ্যালান ছিলেন তাঁর লেন্সের মতোই, নিখুঁত। তাঁর অসুস্থতার কথা জানতে পেরেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন স্পিলবার্গ। সেই চিঠি পড়ে শোনানোও হয়েছিল তাঁকে। পুরানো বন্ধুর লেখা চিঠি শেষের দিনগুলোয় একাধিকবার শুনেছেন অ্যালান ডাভিউ।

ওরলিয়ানে জন্ম হলেও বড় হয়ে ওঠা লস অ্যাঞ্জেলসে। ১২ বছর বয়সে প্রথম রঙিন টেলিভিশনে দেখে আগ্রহ জাগে আলো এবং ছবির প্রযুক্তির ব্যাপারে। পরবর্তী কালে নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায় এই আকর্ষণ। কাজের শুরুয়াত হয় এমটিভিতে। গানের ভিডিয়ো করার কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন প্রথমে। ‘দ্য অ্যানিমেলস’, ‘দ্য হু’ এবং জিমি হেন্ড্রিক্সের ভিডিয়োর কাজ করেন তিনি। এ ছাড়াও ‘দ্য মাঙ্কিস’-এর স্থির আলোকচিত্র গ্রাহক ছিলেন তিনি।

১৯৬৭ সালে তাঁর আলাপ হল স্পিলবার্গের সঙ্গে। স্পিলবার্গের সঙ্গে প্রথম কাজ করলেন ১৯৬৮তে। তৈরি হল ২৬ মিনিটের নির্বাক চলচ্চিত্র ‘অ্যামব্লিন’। এই সিনেমাতেই প্রথম স্পিলবার্গ ব্যবহার করলেন ৩৫ মিলিমিটার ফিল্ম। অ্যালানের দৌলতেই। তার আগে নিজের ৮ বা ১৬ মিলিমিটার ফিল্মে তোলা ছবিতে ফুটে উঠত না কাজ, এখনও মনে করেন স্পিলবার্গ।

আবার ১৯৮২-তে দেখা গিয়েছিল স্পিলবার্গ-অ্যালান জুটিকে। ‘এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল’-এ। চূড়ান্ত বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল ই.টি.। আর ডাভিউ পেয়েছিলেন প্রথম বার অ্যাকাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন।

শুধু সিনেমায় নয়, স্পিলবার্গের ‘অ্যামাজিং স্টোরিস’ সিরিজে একটি পর্বের কাজ করেছিলেন অ্যালান। এছাড়া, ‘ইন্ডিয়ানা জোনস এন্ড টেম্পল অফ ডুম’-এর সেকেন্ড ইউনিট চলচ্চিত্রগ্রহণের ভার ছিল তাঁর ওপরেই।

বেরি লেভিনসনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন ‘বাগসি’ এবং ‘অ্যাভালন’-এর। নব্বই দশকের শেষের দিকে মূলত বাণিজ্যিক কাজেই মনোনিবেশ করেন অ্যালান। ‘কঙ্গো’ এবং ‘অ্যাস্ট্রোনট’স ওয়াইফ’ অ্যালানের সেই সময়ের কাজ।

২০১২-তে অস্ত্রোপচারের পর হুইলচেয়ারেই কেটেছে তাঁর জীবন। সার্জারির পর থেকে তাঁর ঠিকানা পাল্টে যায়। চলে যান দাতব্য সংস্থা মোশন পিকচার এন্ড টেলিভিশন ফান্ডের উডল্যান্ড হিলে। করোনার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলেও, ফিরে এসেছিলেন উডল্যান্ডের বাসস্থানেই। সেখানেই ত্যাগ করেন শেষ নিঃশ্বাস। এমনটাই জানিয়েছে এমপিটিএফের সভাপতি বব বেইচার।

৫ বার মনোনীত হয়েও অস্কার পাননি তিনি। কিন্তু একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ঝুলিতে রয়েছে ‘বাফটা অ্যাওয়ার্ড’। ২০০৭ সালে পেয়েছেন অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ সিনেমাটোগ্রাফারের ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’।

তবে আদ্যন্ত মজার মানুষ ছিলেন অ্যালান। কাজের ব্যাপারে মজা করেই বলতেন, কেবলমাত্র ফ্রেমের মধ্যে কয়েক মুহূর্তের জন্য পরিপূর্ণ লাগে, ফ্রেমের বাইরে যা আদৌ নয়। সেই ফ্রেমের দৃশ্যগুলোই থেকে যাবে আজীবন। দৃশ্যগুলোর মধ্যেই বেঁচে থাকবেন অ্যালান ডাভিউ।

More From Author See More