বিধ্বংসী আমফানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ওরা সকলেই। মাথার ছাদ থেকে চাষের জমি, সবই গ্রাস করেছে ঘূর্ণিঝড়। কোনরকমে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন মানুষরা। তবে এবার শিবির থেকে ফিরে আবার শুরু হচ্ছে ছড়িয়ে পড়া জীবনকে জড়ো করে তোলা। আর সেই জীবন তো শুধুই মানুষের নয়। সুন্দরবনের জীবন মানেই সুন্দরী, গেঁও, গরান, হোগলা, বাইন, গর্জন। যেসব ম্যানগ্রোভ গাছের প্রাচীর এতদিন নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন তো বটেই, সমস্ত দক্ষিণবঙ্গকে। তবে আমাফানের তাণ্ডবে ম্যানগ্রোভ অরণ্যেরও যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাবে সুন্দরবনের ৪২০০ বর্গকিলোমিটার বনভূমির মধ্যে ১৬০০ বর্গকিলোমিটার গ্রাস করেছে ঘূর্ণিঝড়। আর সেই ভেঙে পড়া প্রাচীর মেরামতির কাজে এগিয়ে এসেছেন সুন্দরবনের মহিলারাই।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা লাগানোর কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কাজের সূত্রপাত করলেন এলাকার সাধারণ মানুষই। ক্যানিং ১ নম্বর ব্লকের নিকারিঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৭৫ জন মহিলা প্রায় কোলের সন্তানদের সঙ্গে এইদিন সকালে চলে আসেন বাদাবনে। তারপর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলে ম্যানগ্রোভ চারা রোপণের কাজ। সারাদিনে প্রায় ৫ হাজার গাছ লাগিয়েছেন তাঁরা। আর সব থেকে বড় কথা, উদ্যোগের সকল মহিলাই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত। এলাকার নদীবাঁধ এবং স্লুইজ গেটের মতোই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে তাঁদের বসতবাড়িও।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ঢালের মতো দাঁড়িয়ে থাকে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এর আগে বুলবুল, ফনির মতো ঝড়ের তাণ্ডব থেকে দক্ষিণবঙ্গকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। সুন্দরবন না থাকলে আমফানের ক্ষয়ক্ষতিও আরও অনেক বেশি হত। তবে এই ঝড় সহ্য করতে গিয়ে প্রাচীরের অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। তাকে মেরামত করতে না পারলে আগামী দিনে ছোটখাটো ঝড়েই বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন অনেক বেশি ম্যানগ্রোভের চারা লাগানো। আর এর মধ্যে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এলাকার মহিলাদের এই উদ্যোগ স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। শুধুই ম্যানগ্রোভ অরণ্য নয়, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও খালের মেরামতির দায়িত্বও নিচ্ছেন এলাকার মানুষরা। আসলে পুরোটাই তো তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই।
Powered by Froala Editor