সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক অপসারণে এবার মৎস্যজীবীরাই

হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ— আজ সর্বত্রগামীর চেহারা নিয়েছে প্লাস্টিক (Plastic)। তবে সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত গবেষকরা। কারণ, একদিকে যেমন এই দূষণ প্রভাবিত করছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে, তেমনই সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্যের মাধ্যমেই তৈরি হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এবার সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের জন্য অভিনব উদ্যোগ নিল ইন্দোনেশিয়া (Indonesia)। না, পরিবেশকর্মীদের নিয়ে কোনো বিশেষ বিভাগ নয়, বরং মৎস্যজীবীদের নিয়োগ করা হল প্লাস্টিক অপসারণের কাজে।

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার মৎস্য মন্ত্রালয় ৭০ হাজার মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১০০ কোটি রুপিয়া বরাদ্দ করেছে এই প্রকল্পের জন্য। সরকারের হয়ে এই কাজে স্বেচ্ছায় অংশ নিতে পারেন যে-কোনো মৎস্যজীবী। উদ্ধার করা সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্যের ওজনের অনুপাতেই বেতন দেওয়া হবে তাঁদের। ইন্দোনেশিয়ার ছোটো ছোটো মৎস্যবন্দরগুলিতেও তৈরি করা হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের ওজন পরিমাপ এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিশেষ ইউনিট। সরকারের বয়ান অনুযায়ী, প্রতি ৪ কিলোগ্রাম বর্জ্যের জন্য ১০ ডলার অর্থ পাবেন মৎস্যজীবীরা। 

এর আগে ফ্রান্স, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব নিয়েছিল। সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক অপসারণের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল পরিবেশকর্মীদের বিশেষ বাহিনী এবং বিশাল বিশাল জাহাজ। তাতে একবারেই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও, সেই প্রক্রিয়া যেমন ব্যয়বহুল, তেমনই সময়সাপেক্ষই বটে। কোনো তৃতীয় বিশ্বের দেশের পক্ষে একদিনে এহেন পরিকাঠামো গড়ে তোলাও বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। 

এই সমস্যারই সহজ সমাধান হিসাবেই মৎস্যজীবীদের প্লাস্টিক অপসারণের কাজে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত ইন্দোনেশিয়া সরকারের। দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় সে-দেশের অর্থনীতির একটা বড়ো অংশ নির্ভর করে মৎস্যশিকারের ওপর। প্রতিদিনই কয়েক হাজার ট্রলার, নৌকা এবং জাহাজ সমুদ্রে যায় মৎস্যশিকার করতে। ফলে, মৎস্যজীবীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধারাবাহিকভাবে প্লাস্টিক অপসারণ সম্ভব হবে বলেই বিশ্বাস ইন্দোনেশিয়া সরকারের। পাশাপাশি, আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়ায়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রকল্পে অংশ নেবেন মৎস্যজীবীরাও। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতাও গড়ে উঠবে সাধারণের মধ্যে। 

বলতে গেলে, এক ঢিলেই দুই পাখি মারতে চলেছে ইন্দোনেশিয়ার এই প্রকল্প। তবে এখানেই শেষ নয়। আগামী ৩ বছরে সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনাই লক্ষ্য সে-দেশের প্রশাসনের। শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের তহবিল তৈরির কাজ। সবমিলিয়ে, ইন্দোনেশিয়ার এই প্রকল্প ভবিষ্যতের দূষণমুক্ত পৃথিবী নির্মাণের পথ দেখাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো… 

Powered by Froala Editor

More From Author See More