কিশোর বয়সেই বুঝেছিলেন, আর পাঁচজনের থেকে খানিকটা আলাদা তিনি। কিন্তু তাঁর পরিবার, সমাজ কি সে-কথা বুঝবে? দীর্ঘ ১৫ বছর তাই নিজের পরিচয় গোপন করতে হয়েছিল তাঁকে। অবশ্য তাতে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সামনে এসেছিল ট্রান্সম্যান সত্তার কথা। তখন তিনি পাঠ্যরত কলেজে। শুধুমাত্র প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষ হওয়ার জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল কলেজ থেকে। বাধ্য হয়ে ছাড়তে হয়েছিল নিজের বাড়িও।
প্রবীণ নাথ (Praveen Nath)। গত বছর সংবাদপত্রের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন কেরলের এই ব্যক্তি। প্রথম রূপান্তরকামী পুরুষ (First Trans-Man) হিসাবে ঝুলিতে পুরেছিলেন মিস্টার কেরল খেতাব। বর্তমানে তিনিই হয়ে উঠেছেন হাজার হাজার প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের অনুপ্রেরণা।
কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর প্রবীণ আশ্রয় পেয়েছিলেন ট্রান্স অ্যাসোসিয়েশন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সহায়ত্রিকা’-য়। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর নতুন জীবন। পাড়া প্রতিবেশীদের তীর্যক বক্তব্য, হাসি-ঠাট্টাকে উপেক্ষা করে শুরু হয় তাঁর স্বপ্নপূরণের লড়াই। ট্রান্সজেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের দৌলতেই বডি বিল্ডিং প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সুযোগও পান প্রবীণ।
তবে প্রতিবন্ধকতা ছিল সেখানেও। কেরলের কোনো বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতাতেই ছিল না রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা কোনো বিভাগ। বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় পুরুষদের বিভাগেই অংশ নিতে হয়েছিল তাঁকে। সেসময় তিনি পাশে পেয়েছিলেন তাঁর প্রশিক্ষক ভিনু মোহন, মিস্টার থ্রিসুরকে। তাঁরাও সামিল হন প্রবীণের লড়াইয়ে। তাঁদের উদ্যোগেই ২০২০ সালের শেষে মিস্টার কেরালা অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ বিভাগ চালু করে ট্রান্স-ব্যক্তিত্বদের জন্য। ২০২১ সালে সেই প্রতিযোগিতাতেই সেরার শিরোপা জিতে নজির গড়েন প্রবীণ। তবে তাঁর কাছে এর চেয়েও বড়ো প্রাপ্তি ছিল পরিবারের মানসিকতায় পরিবর্তন। এই খেতাব জেতার পর সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন তাঁর মা। সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির সমস্ত খরচ বহন করেছিলেন তিনিই।
মিস্টার খেতাবের মুকুট মাথায় পরার পর প্রবীণের স্বপ্ন এখন অলিম্পিকের মঞ্চ। একদিন অলিম্পিকেও রূপান্তরকামীদের জন্য বিশেষ বিভাগ চালু হবে বলেই আশাবাদী তিনি। বডি বিল্ডিং-এর পাশাপাশি তাই সমানভাবেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন ভারোত্তলনের প্রস্তুতিও। প্রবীণের এই লড়াই, সমস্ত প্রতিকূলতাকে হারিয়ে মাথা উঁচু বেঁচে থাকা অনুপ্রেরণা জাগাচ্ছে প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে…
Powered by Froala Editor