ছোটো থেকেই নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। একসময় নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে বাকি ছেলে বন্ধুদের মতোই হয়ে ওঠার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু যা স্বাভাবিক নয়, তা তো জোর করে করা সম্ভব নয়। পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মালেও তিনি যে একজন মহিলা। অবশ্য বহু যুদ্ধ পেরিয়ে এসে এখন স্বচ্ছন্দে নিজের পরিচয় দিতে পারেন। তিনি ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী (Transgender) টেনিস কোচ নিশিকা গোমস (Nishica Gomes)। এতদিনের অবসাদ ভুলতে নিজেকে পুরোপুরি খেলার জগতেই ডুবিয়ে রাখেন ৪৫ বছরের নিশিকা।
নিশিকা এখন এসে বুঝতে পারেন, তিনি কোনোদিনই পুরুষ ছিলেন না। কিন্তু ছোটোবেলায় সেটা বোঝা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। যে সমাজের মধ্যে তিনি বেড়ে উঠেছেন, সেখানে রূপান্তরকামিতা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না। তবু সবাই বুঝতে পারতেন, তিনি ঠিক বাকিদের মতো নন। আর এই বাকিদের মতো হতে না পারাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড়ো আক্ষেপের জায়গা। স্কুলে বন্ধুরা প্রতিদিন বিদ্রুপ করতেন তাঁকে। এমনকি শারীরিক নিগ্রহও সহ্য করতে হয়েছে। তবে শরীরের যন্ত্রণা তো একদিন মুছে যায়। কিন্তু মনের যন্ত্রণা মুছবে কীভাবে? দিনের পর দিন ঘুমিয়ে পড়ার আগে মনে মনে প্রার্থনা করেছেন, এই ঘুমই যেন তাঁর শেষ ঘুম হয়। কলেজজীবন শুরু হওয়ার আগেই গভীর অবসাদে ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও পারেননি। তাহলেই যে পরিচিত মানুষরা তাঁকে পাগল বলবেন।
তবে কলেজ জীবনেই প্রথম খেলাধুলোর স্বাদ পেলেন নিশিকা। এরপর ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদও অনেকটা কেটে যেতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে মনোবিদের পরামর্শও নিলেন। তিনিও পরামর্শ দিলেন আরও বেশি করে খেলাধুলো করতে। তবে প্রথাগতভাবে টেনিস শেখার শুরু আরও বেশ কয়েক বছর পর। ৩৭ বছর বয়সে এসে ক্লাবে যোগ দিলেন নিশিকা। আর ৪২ বছর বয়সের মধ্যেই জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগও পেয়ে গেলেন। সম্প্রতি অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে শংসাপত্র নিয়ে তিনি টেনিসের প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেছেন। নিশিকা বিশ্বাস করেন, ছোটো থেকেই প্রত্যেকের কিছুটা সময় দেওয়া উচিত নিজের পরিচয়কে জানতে। সেটা শুধু লিঙ্গ বা যৌনতার প্রশ্নে নয়। মানুষ কী করতে চায়, কী তার ভালো লাগে, এটা জানাই সবার আগে প্রয়োজন। তিনি নিজে যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছেন, ভবিষ্যতে কাউকে যেন তার মুখোমুখি হতে না হয় – এটাই চান নিশিকা গোমস।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এই প্রথম, রাজ্যের লিগাল সার্ভিস অথোরিটির প্যানেলে তৃতীয় লিঙ্গের আইনজীবী