কলেজজীবনে তো বটেই, এমনকি সফল আইনজীবী হওয়ার পর কর্মক্ষেত্রেও তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। কারণ তিনি তৃতীয়লিঙ্গের মানুষ। তবে দমেননি একটুও। বরং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পরিচয় এবং অধিকারের পক্ষেই লড়াই চালিয়ে গেছেন অক্লান্তভাবে। অঙ্কন বিশ্বাস। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ লিগাল সার্ভিস অথোরিটির প্যানেলে প্রথম তৃতীয়লিঙ্গ আইনজীবী সদস্য হয়ে এক নতুন ইতিহাস রচনা করলেন তিনি।
২০১৩ সালে যোগেশচন্দ্র কলেজ থেকে আইন নিয়ে পাশ করেন অঙ্কন বিশ্বাস। প্র্যাকটিস শুরু হয়েছিল বারাসাত আদালতে। বর্তমানে মূলত কলকাতা হাইকোর্টেই কর্মরত তিনি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার, নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য একাধিকবার সরব হয়েছেন অঙ্কন। নারী ও রূপান্তরকামীদের সুরক্ষার জন্য যাতে বিশেষ হেল্পলাইন চালু করা যায়, ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েই এই বিষয়ে হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির কাছে মামলা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি জেলাস্তরে প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের নানাভাবে সাহায্যের নিরন্তর চেষ্টাও চালিয়ে যান।
তবে কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের পরেও, হয়রানি থেকে মুক্তি পাননি অঙ্কন। গলার স্বর কিংবা আচরণের জন্য যেমন তীর্যক কটূক্তি শুনতে হত, তেমন যাতায়াতের পথে কখনও শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি, আইনি পুনর্গঠনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য লিগাল সার্ভিস অথোরিটিতে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন পেশ করেছিলেন স্বয়ং কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল। সেই আবেদনের নিরিখেই তাঁকে সদস্যপদ প্রদান করল লিগাল সার্ভিস অথোরিটির প্যানেল।
তবে ‘অঙ্কন’ নয় ‘অঙ্কনি’ নামেই আগামীদিনে এই দায়িত্ব নিতে চলেছেন তরুণ আইনজীবী। তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয়ের প্রেক্ষিতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। আসলে গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টারের পদের জন্য আবেদন করতে গিয়েই আইনি অসঙ্গতি চোখে পড়েছিল তাঁর। সেখানে পরিচয় হিসাবে পুরুষ এবং নারীর বিকল্প থাকলেও, সুযোগ ছিল না তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পরিচয়-প্রকাশের। সেসময় তাঁর উদ্যোগেই যুক্ত করা হয় ‘আদার্স’ ক্যাটাগরি। প্যানেলভুক্তির সময় নিজের নাম পরিবর্তন করে সেই কথাটাই যেন মনে করিয়ে দিলেন তিনি। অঙ্কনের এই স্বীকৃতি আদতে শুরু তাঁর নয়, বরং বৃহত্তর অর্থে তা গোটা রাজ্যের প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের জয়…
আরও পড়ুন
অলিম্পিকের প্রথম রূপান্তরকামী অ্যাথলিট, ইতিহাস গড়ার পথে লরেল হুবার্ড
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রূপান্তরকামীদের কাজ দিলে আয়করে ছাড়, ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের