আর মাত্র মাস দেড়েকের প্রতীক্ষা, তারপরেই বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তি। বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতের ইতিহাসেও এক উজ্জ্বল দিন এই বিজয় দিবস। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে সামিল ছিলেন ভারতীয় সেনানীরাও। ঐতিহাসিক এই দিনটির প্রস্তুতির মধ্যেই বাংলাদেশের দুই নাগরিককে প্রদান করা হল পদ্মভূষণ সম্মান (Padma Bhushan)। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো নাগরিক পদ্ম পুরস্কার পেলেন। ২০২০ সালে মরণোত্তর পদ্মভূষণ পুরস্কারের জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলির (Syed Muazzem Ali) নাম। আর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঘোষণা হয় কর্নেল কাজি সাজ্জাদ্দ আলি জাহিরের (Col Quazi Sajjad Ali Zahir) নাম। কিন্তু কোভিড অতিমারীর জন্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গতকাল মুয়াজ্জেম আলির পরিবারের এবং কর্নেল জাহিরের হাতে তুলে দেওয়া হয় পদ্মভূষণ পুরস্কার।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দুজনেই কিংবদন্তি। সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি পাকিস্তান সরকারের আমলা হিসাবে তখন আমেরিকায় রয়েছেন। কিন্তু সেখানে বসেই আমেরিকায় বাংলাদেশের দূতাবাস তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। জাতিপুঞ্জের সদস্য হিসাবে স্বাধীন বাংলাদেশের সীমান্ত নির্ধারণের কাজেও সহযোগিতা করেছেন। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন রাষ্ট্রদূত হিসাবে ভারতেও কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি স্টার’ প্রকাশের পিছনেও ছিলেন মুয়াজ্জেম আলি।
অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্নেল জাহির পাক সেনাবাহিনীর সৈনিক। কিন্তু যে মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের উপর পাক বাহিনীর অত্যাচারের খবর তাঁর কাছে পৌঁছায়, সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। তখন সঙ্গে ছিল মাত্র ২ টাকা। পোশাক বলতে শুধুই পরনের হাফপ্যান্ট। মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক বাহিনী মুক্তিবাহিনী তৈরি এবং তাঁর প্রশিক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন কর্নেল জাহির। আজও কর্নেল জাহিরের নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি রেখেছে পাকিস্তান সরকার।
মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগেই এঁদের হাতে পদ্ম পুরস্কার তুলে দেওয়ার ভিতর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বৈদেশিক সম্পর্ক অনেকটাই উন্নত হবে বলে আশা করছেন অনেকে। তবে এইসমস্ত রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরে গিয়েও এক অন্য নজির তৈরি হয়। কাঁটাতারের সীমানার দুপারে আসলে যে একই ইতিহাস ও সংস্কৃতির স্রোত বইছে।
আরও পড়ুন
৮৫টি নদীর জল নিয়ে এশিয়ার প্রথম ‘জলের জাদুঘর’ বাংলাদেশে
Powered by Froala Editor