কোনো বিশেষ প্রজাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে তার বিবর্তনের ইতিহাস— সবটাই ধরে রাখে জিন। পলিপেপটাইড গঠিত এই জৈব শৃঙ্খলকেই তাই ধরে নেওয়া হয় বংশগতির আণবিক একক হিসাবে। ফলে, মানব দেহকোশের রহস্য, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা, প্রতিরোধ এবং নিরাময়ের জন্য জিন বিশ্লেষণের পথে নেমেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার চরমতম সাফল্য মিলল সেই গবেষণায়। প্রথমবারের জন্য মানব জিনের (Human Genome) সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধার (Whole Sequence) করলেন গবেষকরা।
আজ থেকে বছর ২০ আগের কথা। ২০০৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মানব জিনের বিন্যাস। হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্টের সৌজন্য প্রকাশ্যে এসেছিল ৯২ শতাংশ মানব জিনের গঠন। বাকি ৮ শতাংশ জিন এতদিন অজানা ছিল মানুষের কাছে। আর তার সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেই অজানা বেসের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। সাম্প্রতিক আবিষ্কারের পর সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ কোটিতে। সবমিলিয়ে ৩০০ কোটি জিনের অস্তিত্ব রয়েছে মানব দেহে। তার সাপেক্ষে ১ কোটি সংখ্যাটি নগণ্য বলাই চলে।
টেলিমোর টু টেলিমোর কনসোর্টিয়ামের শতাধিক গবেষক যুক্ত ছিল এই গবেষণার সঙ্গে। সম্প্রতি এই গবেষণায় সরকারি শিলমোহর বসার পর, তা ঘোষণা করেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওয়ার্ড হিউস মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রধান ইভান ইচলার।
সদ্য-আবিষ্কৃত ৮ শতাংশ জিনকে এতদিন ধরে নেওয়া হত জিনোম ডার্ক ম্যাটার হিসাবে। এই বেসগুলির গুরুত্ব বা বৈশিষ্ট্য ঠিক কী— সে ব্যাপারে কোনো ধারণাই ছিল না বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি সেই সিকোয়েন্স সামনে আসার পর অনেকটাই উন্মোচিত হয়েছে মানব জিনের রহস্য। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই জিনগুলির অধিকাংশই রয়েছে নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। তবে সক্রিয় জিনের সংখ্যা সহস্রাধিক। যার মধ্যে ৬২২টি জিন চিকিৎসাক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে বলেই অভিমত গবেষকদের।
উল্লেখ্য, বিগত দশ বছরে জীববিজ্ঞানের জগতে এটিই সর্ববৃহৎ ও উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার বলেই চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এই সিকোয়েন্সের ওপর ভিত্তি করে আগামীদিনে চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং মানব বিবর্তনের অন্যান্য নানান জটিল রহস্যের যবনিকাপতন হতে পারে বলেই অভিমত তাঁদের…
Powered by Froala Editor