আইনস্টাইনের নামাঙ্কিত মৌল, এই প্রথম তৈরি হল গবেষণাগারে

আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। তারপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশক। এবার সামনে এল অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের নামের অনুসরণে নামাঙ্কিত মৌল ‘আইনস্টাইনিয়াম’-এর বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি বার্কলে ল্যাবের বেশ কিছু বিজ্ঞানী শেষ পর্যন্ত এই বিস্ময়কর মৌলের রহস্যোন্মচন করলেন।

১৯৫২ সালে পৃথিবীতে প্রথমবারের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এনিয়েভেটক অ্যাটল-এর এলুজেলাব দ্বীপে বিস্ফোরণ করা হয় হাইড্রোজেন বোমার। সেই বিস্ফোরণেই তৈরি হয়েছিল এই মৌলটি। হাইড্রোজেন বোমার ধ্বংসাবশেষ থেকেই প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল এই মৌলটি। তবে অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় হওয়ায় দ্রুত ক্ষয়ীভূত হয়ে যায় তার নমুনাগুলি। সম্পূর্ণ বিষয়টি প্রাথমিকভাবে গোপন রেখেছিল মার্কিন প্রশাসন। তারপর ১৯৫৫ সালে প্রকাশ্যে আনা হয় এই তথ্য। নতুন মৌলের নাম করণ করা হয় আইনস্টাইনিয়াম।

তবে সাম্প্রতিক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত মৌলটির নমুনা সেই বিস্ফোরণের নয়। বরং তা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে ওক রিচ ল্যাবরেটরিতে। বিগত ১০ বছরের অবিরাম চেষ্টার পর গত বছর শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিলেন বার্কলের বিজ্ঞানীরা। এই নমুনা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী হওয়ার কারণে কোভিড মহামারীর মধ্যেও চালিয়ে যেতে হয়েছিল গবেষণা।

পর্যায়সারণিতে আইনস্টাইনিয়ামের জায়গা ৯৯তম স্থানে। অর্থাৎ ভরের নিরিখে ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম কিংবা তেজস্ক্রিয় নেপচুনিয়ামের থেকেও ভারী মৌল এটি। সেইসঙ্গে তীব্র তেজস্ক্রিয়ও বটে। ‘নেচার’ বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, এটির সবথেকে সহজলভ্য আইসোটোপের অর্ধজীবন মাত্র ২০ দিন। তবে গবেষণার সুবিধার জন্য বিজ্ঞানীরা আইনস্টাইনিয়াম-২৪৪ নিয়েই কাজ করেছেন। যার অর্ধজীবন ২৭৬ দিন। অন্ধকারে উজ্জ্বল নীল বর্ণের একটি রশ্মি বিকিরিত হয় মৌলটি থেকে।

তবে সাম্প্রতিক গবেষণা এবং সমীকরণ যেন প্রমাণ করে দিল মৌলটির নামকরণের যথার্থতা। ভারি এই মৌলের কেন্দ্রকে ৯৯টি প্রোটন থাকার কারণে, ইলেকট্রনগুলির গতিবেগ প্রায় আলোর কাছাকাছি হয়। আর সেই কারণেই চলে আসে আপেক্ষিকতাবাদের প্রসঙ্গও। এই গবেষণার প্রায় সমস্ত গণনার ক্ষেত্রেই আপেক্ষিকতার সূত্রের কথা মাথায় রেখেই করতে হয়েছে বলে জানান গবেষকরা।

ইলেকট্রনের এই উচ্চ গতিবেগের কারণে মৌলটির উচ্চ শক্তিক্ষেত্রে পারমাণবিক বিন্যাসও পরিবর্তিত হতে থাকে দ্রুত। যা বদলে ফেলে মৌলটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যকেও। এক কথায় এই ঘটনা যেন অবিশ্বাস্য। আইনস্টাইনিয়ামের এই বিশেষ রসায়নের সমাধান মিললে পরবর্তীকালে তার তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আপাতত এর ব্যবহারিক প্রয়োগের ব্যাপারে কোনো আলোকপাত করতে সমর্থ হননি বিজ্ঞানীরা…

আরও পড়ুন
আইকিউ আইনস্টাইনের প্রায় দেড় গুণ, বিস্মৃতির অতলে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্ব

Powered by Froala Editor