১৯৩৩ সাল। আমেরিকান জোতির্বিদ ফ্রিটজ জুইকি দাবি করেছিলেন ছায়াপথের মধ্যে অবস্থিত নক্ষত্রদের সম্মিলিত ভর সেই ছায়াপথের ভরের মাত্র ১ শতাংশ। গাণিতিক ব্যাখার মাধ্যমে বুঝিয়েছিলেন, তা না হলে তাদের মহাকর্ষীয় টান ছিঁড়ে ছায়াপথ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাই যদি সত্যি হয় তবে ছায়াপথের বাকি ভরটা কোথায় লুকিয়ে রয়েছে? ৭০-এর দশকে এই উত্তর দেন জোতির্বিদ ভেরা রুবিন এবং কেন্ট ফোর্ড। জানান, এই অদৃশ্য ভরই আসলে ডার্ক ম্যাটার। যার হদিশ দিয়ে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন। এই ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ মহাবিশ্বের মোট ভরের ৮০ শতাংশ। কিন্তু মহাশূন্যের মধ্যে কীভাবে ছড়িয়ে আছে এই পদার্থ?
না, সেই উত্তর এতদিন অজানাই ছিল আমাদের কাছে। সম্প্রতি সেই রহস্যে আলোকপাত করলেন পদার্থবিজ্ঞানীরা। তৈরি করে ফেললেন মহাবিশ্বের বৃহত্তম মানচিত্র। আর সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গেল কোথায় কোথায় লুকিয়ে রয়েছে রহস্যময় ডার্ক ম্যাটাররা। ‘ডার্ক এনার্জি সার্ভে কোলাবরেশন’ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয় গবেষণাপত্রটি। গবেষণায় জড়িত ছিলেন গোটা বিশ্বের প্রথম সারির জোতির্বিদরা।
কিন্তু অদৃশ্য হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হল ডার্ক ম্যাটারদের? গবেষকরা জানাচ্ছেন, দূরবর্তী কোনো ছায়াপথ থেকে আলো আসার তা সরলরেখা বরাবর আসে না। তার গতিপথে ডার্ক ম্যাটারের অবস্থান খানিকটা বিকৃত করে সেই সরলরেখাকে। এই পদ্ধতির অনুসরণ করেই ডার্ক ম্যাটারদের শনাক্ত করেছেন পদার্থবিদরা।
ইন্টারন্যাশনাল ডার্ক এনার্জি সার্ভের গবেষকরা চিলির ভিক্টর এম ব্যাঙ্কো টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিলেন প্রায় ১০ কোটি গ্যালাক্সির ছবি। তারপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সেখান থেকে আগত আলোকরশ্মির বিশ্লেষণ করেই প্রস্তুত করা হয় এই মানচিত্র। অবশ্য পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান মহাকাশের মাত্র এক-অষ্টমাংশই শুধু প্রতিফলিত হয়েছে এই মানচিত্রে। সেখানে গোলাপি, বেগুনি এবং কালো রঙের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে মহাকাশের চরিত্রকে। ম্যাপের উজ্জ্বলতম অংশগুলিই সূচিত করে, সেখানে ডার্ক ম্যাটারের ঘনত্ব সবথেকে বেশি। অন্যদিকে কালো অংশগুলি হল কসমিক ভয়েড বা প্রকৃতপক্ষে শূন্যস্থান।
আরও পড়ুন
বিরল আইকিউ-র অধিকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘ইয়ং আইনস্টাইন’
তবে এই মানচিত্রই এক দ্বন্দ্বের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে পদার্থবিদ্যাকে। যদি এই মানচিত্র ও গবেষণা সত্যি হয়ে থাকে, তবে পদার্থবিদ্যার এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু সেইসঙ্গেই ভুল প্রমাণিত হতে পারে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বও। বদল করতে হতে পারে পদার্থবিদ্যার গোটা ধারণাই। কারণ, আইনস্টাইনের মতে বিগব্যাং-এর পরে গোটা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল ডার্ক ম্যাটার। সেই তত্ত্ব অনুযায়ী ডার্ক ম্যাটারের ঘনত্বের তারতম্য হওয়া উচিত নয়। সেখানেই থেকে যাচ্ছে সংশয়। স্পষ্ট উত্তর খুঁজে পেতে আরও বিস্তারিত গবেষণার দরকার আছে বলেই অভিমত গবেষকদের। তবে সম্পূর্ণ নতুন এই তত্ত্বের ইঙ্গিত পেয়ে রোমাঞ্চিত সকলেই...
আরও পড়ুন
ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি হওয়ার অনুরোধ, প্রস্তাব ফেরালেন আইনস্টাইন
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আইনস্টাইনের নামাঙ্কিত মৌল, এই প্রথম তৈরি হল গবেষণাগারে