‘দুধ’ দেয় পিঁপড়েরাও? আশ্চর্য আবিষ্কার গবেষকদের

ডিম ফুটেই জন্মায় তারা। পালকে ঢাকা শরীরে রয়েছে হাঁসের মতো চঞ্চুও। অস্ট্রেলিয়া ও তাসমানিয়ার আশ্চর্য জীব প্লাটিপ্লাসের কথা অল্প-বিস্তর সকলেরই জানা। স্তন্যপায়ী না হলেও, মাতৃদুগ্ধ ক্ষরণ করতে সক্ষম ‘মিসিং লিংক’ গোত্রের এই প্রাণী। বিবর্তনবাদের সূত্র অনুযায়ী, পাখি থেকে স্তন্যপায়ীতে বিবর্তনের সময় মধ্যবর্তী সেতুর কাজ করেছিল প্লাটিপ্লাসরা। তবে শুধুই কি প্লাটিপ্লাস? সেই তালিকায় অনায়াসেই জায়গা করে নিতে পারে পিঁপড়ে (Ant)। 

হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সাম্প্রতিক গবেষণা এবার রীতিমতো পাল্টে দিল প্রকৃতির চেনা সমীকরণকে। প্রথমবার গবেষকরা আবিষ্কার করলেন, এক ধরনের বিশেষ তরল নিঃসরণ করে পিঁপড়েরা। যার কাজ হুবহু দুধের (Milk) মতোই। পিঁপড়ের লার্ভা কিংবা পিউপা তো বটেই, এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদেরও পুষ্টি জোগায় এই তরল। গত ৩০ নভেম্বর নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই গোটা বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে এই গবেষণাপত্র। 

নিউইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জড়িত ছিলেন এই বিশেষ গবেষণাটির সঙ্গে। পিঁপড়েদের জীবনযাপনের ধারা এবং তাদের আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতেই এই পরীক্ষা শুরু করেছিলেন মার্কিন গবেষক অরলি স্নির। কৃত্রিমভাবে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করেছিলেন পিঁপড়ের কলোনি। সেখানে পর্যবেক্ষণ চালানোর সময়ই প্রথম তাঁর নজরে আসে বিষয়টা। 

অরলি লক্ষ করেন, প্রাপ্তবয়স্ক পিঁপড়ের ঠিক পেটের নিচে ধীরে ধীরে জমা হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের তরল। ডিম ফুটে বেরনো লার্ভাদের এই তরল সেবন করতেও দেখেন তিনি। অন্যদিকে কিউটিকলের মধ্যে আবদ্ধ থাকায়, খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করতে পারে না পিউপারা। তবে তাদেরও এই তরলের সংস্পর্শে নিয়ে আসে প্রাপ্তবয়স্ক পিঁপড়েরা। এমনকি নিজেরাও একে-অপরের ‘দুধ’ পান করে তারা। 

‘দুধ’ বলা এই কারণেই, কেননা সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এই তরলে ১৮৫টি প্রোটিন চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। তাছাড়াও এই তরলে রয়েছে ১০০টিরও বেশি বিপাকজাত পদার্থ। যার মধ্যে অ্যামাইনো অ্যাসিড, শর্করা ও ভিটামিন রয়েছে। ফলে কার্যকারিতা ও পুষ্টি সরবরাহের দিক থেকে এই তরল যে দুধেরই প্রতিস্থাপক, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। 

প্রাথমিকভাবে ক্লোনাল রাইডার পিঁপড়ে বা ‘ওকেরাই বিরোই’ প্রজাতির ক্ষেত্রেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছিলেন গবেষকরা। পরবর্তীতে এই পরীক্ষা করা হয় অন্যান্য পিঁপড়ে প্রজাতির ক্ষেত্রেও। সেখানেও ধরা পড়ে একই ঘটনা। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, এই ‘দুধ’ ভক্ষণ না করলে, স্বয়ং দুগ্ধধাত্রীর জীবনই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই দুধ ক্ষরণের কিছুক্ষণ পর থেকেই তাতে থাবা বসায় ছত্রাক। যা পিউপাদের মেরে ফেলে, এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক পিঁপড়েকেও আক্রান্ত করতে পারে। এই দুধ সেবনের মাত্রার ওপরই নির্ভর করে কোনো লার্ভা রানি হয়ে উঠবে কিনা, সেই সম্ভাবনাও রয়েছে। অবশ্য এই বিষয়ে এখনও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই দাবি গবেষকদের… 

Powered by Froala Editor