সার্নের কণা ত্বরকে ধরা দিল ব্রহ্মাণ্ডের আদিমতম কণা ‘X’

আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে সুইজারল্যান্ডের সার্নের এলএইচসি-তে গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন ঈশ্বর কণা বা হিগস বোসন। এবার এক দশক পরে আরও সার্নের বৃহত্তম কণা ত্বরক যন্ত্রে ধরা দিল আরও এক ‘অপার্থিব’ কণা। পার্টিকল ‘X’ (Particle X)। হ্যাঁ, ব্রহ্মাণ্ডের জন্মের ঠিক পরেই, অর্থাৎ বিগ ব্যাং-এর পরেই সৃষ্টি হয়েছিল এই বিশেষ কণাটি। তবে অত্যন্ত অস্থায়ী হওয়ায় অত্যন্ত দ্রুত তা ক্ষয়ীভূত হয়ে যায়। কিন্তু কীভাবে এই কণা ধরা দিল বিজ্ঞানীদের চোখে?

বলতে গেলে আজ নয়। ২০০৩ সালেই পার্টিকল ‘X’ বা রহস্যময় কণার সম্পর্কে প্রথম প্রমাণ পেয়েছিলেন গবেষকরা। জাপানের এক কণা ত্বরকযন্ত্রে কয়েক লক্ষ ইলেকট্রন ও পজিট্রনের সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ কণাটি। তবে তাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। প্লাজমা স্রোতের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন গ্লুয়ন, কোয়ার্কের ভিড় ঠেলে আলাদা করে এই কণাটিকে পরীক্ষার কোনো সুযোগই পাননি গবেষকরা। তা ঠিক কীভাবে উৎপাদিত হয়েছিল— সে ব্যাপারেও অনিশ্চিত ছিলেন তাঁরা। শুধু জানা সম্ভব হয়েছিল তার অস্তিত্ব এবং অতিক্ষয়ী চরিত্রের কথা। 

তারপর থেকে বিগত দু’দশক ধরেই চলছিল ‘X’ কণার অনুসন্ধান। বিভিন্ন কণার সংঘর্ষের মাধ্যমে নিরন্তর চেষ্টা চলেছে এই কণাটি উৎপাদনের। শেষ পর্যন্ত ভারী আয়নের সংঘর্ষে সাফল্য পেলেন গবেষকরা। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে ধরা ছিল পার্টিকল ‘X’। এক্ষেত্রেও রহস্যময় কণা ছাড়াও তৈরি হয়েছিল কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমার স্রোত। তবে মেশিন লার্নিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে তার মধ্যে থেকে মূল কণাগুলির তথ্য বেছে নেন সার্ন ও এমআইটি’র গবেষকরা। 

কিন্তু এই কণার তাৎপর্য বা বিশেষত্ব কী? গবেষকদের বিশ্বাস, আদিমতম এই কণার প্রভাবেই তৈরি হয়েছিল অন্যান্য নানাধরনের মৌলিক কণা। অনুমান, চারটি কোয়ার্কের শক্তিশালী বন্ধনে তৈরি হয়েছে এই বিশেষ কণাটি। আবার সম্পূর্ণ অজানা কোনো মৌলিক কণার গঠনেও তৈরি হয়ে থাকতে পারে ‘X’ কণা। রয়েছে সেই সম্ভাবনাও। তিনটি কোয়ার্কের বন্ধনে যেভাবে প্রোটন বা নিউট্রন তৈরি হয়, ঠিক সেভাবেই তৈরি হয়েছে ‘X’। তবে তার অভ্যন্তরীণ বন্ধনশক্তি অনেক দৃঢ়। 

আরও পড়ুন
আবিষ্কৃত চারটি নতুন কণা, বদলাবে পদার্থবিদ্যার তত্ত্বও

বিগ ব্যাং-এর পর এক সেকেন্ডের দশ লক্ষ ভাগ সময়ের মধ্যেই জন্ম নিয়েছিল পার্টিকল ‘X’। আবার তেমন দ্রুত গতিতেই ক্ষয়ীভূত হয়ে অন্য কণায় রূপান্তরিত হয়ে যায় সেগুলি। কিন্তু কোন কণায় বদলে গেল ‘X’, ব্রহ্মাণ্ডগঠনে তাদের ভূমিকাই বা কী— সেসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও বিস্তারিত পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। তবে সার্নের এই কৃতিত্বকে অসাধ্যসাধন বললেও কম বলা হবে। অন্ধকারের মধ্যে প্রথম আলোকপাত করল তারাই। এ-কথা স্পষ্ট, বাকি রহস্য উন্মোচিত হতে আর বেশি দেরি নেই…

আরও পড়ুন
সূর্যের ‘সি-এন-ও’ চক্র থেকেই নির্গত হয় নিউট্রিনো কণা, অবশেষে মিলল প্রমাণ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘মেসন’ কণার ধারণা দিয়েও নোবেল পাননি বিজ্ঞানী দেবেন্দ্রমোহন বসু

More From Author See More