নিউক্লিয় সংযোজনকে কাজে লাগিয়ে শক্তি-উৎপাদন, সাফল্য পেলেন মার্কিন গবেষকরা

বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বের গবেষকদের মাথা-ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তন। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে অপ্রচলিত শক্তির সন্ধান চলছে বিশ্বজুড়ে। তবে গোটা দুনিয়ার চাহিদা মেটানোর মতো পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি আজও। তবে এই অভাব পূরণ করতে পারে নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া। সহজ ভাষায় যাকে আমরা চিনি ‘ফিউশন এনার্জি’ নামে। এবার এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বিজ্ঞান। 

আজকের দিনে ভারতই হোক কিংবা যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া— পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় নিউক্লিয় বিভাজন বিক্রিয়াকে। ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম কিংবা প্লুটোনিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থ। তাতে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদিত হয় ঠিকই, তবে পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণে খরচ করতে হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। তাপবিদ্যুতের মতো সরাসরি পরিবেশে কার্বন নির্গমন না করলেও, পারমাণবিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকেই। এখানেই ‘অনন্য’ নিউক্লিয় সংযোজন (Nuclear Fusion)। 

প্রথমত, সংযোজন বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় হাইড্রোজেন এবং লিথিয়াম। যা সহজলভ্য প্রকৃতিতে, পাশাপাশি তা দূষক নয় মোটেই। অন্যদিকে বিক্রিয়ার পর ব্যাপক মাত্রায় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপাদিত হয় না এক্ষেত্রে। পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ শক্তি।

সূর্য তো বটেই, ব্রহ্মাণ্ডের যে-কোনো জীবিত নক্ষত্রের মধ্যেই অবিরাম ঘটে চলেছে এই বিক্রিয়া। ১৯৫০-এর দশক থেকেই এই বিক্রিয়াকে বশ করতে গবেষণা শুরু হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই তৈরি হয়েছিল ঘাতক হাইড্রোজেন বোমা। এমনকি চিন, যুক্তরাজ্য-সহ একাধিক দেশ কৃত্রিম সূর্যও তৈরি করেছে এই বিক্রিয়া কাজে লাগিয়ে। তবে আজ পর্যন্ত মানব কল্যাণে তথা শক্তি উৎপাদনের জন্য ফিউশন বিক্রিয়াকে ব্যবহার করা যায়নি। তার কারণ, এই বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্যই প্রয়োজন পড়ে বিপুল পরিমাণ শক্তির। যা সরবরাহ করাতে হয় বাহ্যিকভাবে। 

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশানাল ইগনিশন ফেসিলিটি’-র গবেষকরা এবার সমাধান খুঁজে দিলেন এই সমস্যারই। ১৯২-বিম লেজাররশ্মির মাধ্যমে অতিস্বল্প মাত্রার হাইড্রোজেন জ্বালানিতে উচ্চশক্তি সরবরাহ করেছিলেন তাঁরা। আর তাতেই ত্বরান্বিত হয় নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া। যা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৪ সেকেন্ড। তবে মজার বিষয় হল, বিক্রিয়ায় উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ ছাপিয়ে যায় সরবরাহিত শক্তিকে। খানিক সহজ করে বলতে গেলে, ইনপুটের থেকে আউটপুট বেশি আসে এই গবেষণায়। উল্লেখ্য, বিশ্বের মধ্যে প্রথম এই সাফল্য অর্জন করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরাই। 

অবশ্য, এই প্রযুক্তিকে পূর্ণ-স্কেল শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং উন্নত মানের যন্ত্রের। যা নির্মাণ করতে এখনও সময় লাগবে দেড় থেকে দু’-দশক। তবে আগামীতে এই শক্তিই বদলে দেবে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ, এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। নিউক্লিয় সংযোজনকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে গোটা বিশ্বেরই শক্তি চাহিদা মিটবে, নিয়ন্ত্রিত হবে দূষণও। ইতিমধ্যেই এই শক্তিকে সবুজ সংকেত দিয়েছে ‘আইএইএ’ তথা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি…

Powered by Froala Editor